মৃগীজনিত খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে প্রথম রোগীর মাথার খুলিতে যন্ত্র স্থাপন

প্রতীকী ছবি

গুরুতর মৃগীরোগে আক্রান্ত যুক্তরাজ্যের এক কিশোরের মাথার খুলিতে একটি নতুন যন্ত্র (ডিভাইস) স্থাপন করা হয়েছে। খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে এই প্রথম কোনো মৃগীরোগীর খুলিতে পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্র স্থাপন করা হলো।

মৃগীরোগে আক্রান্ত কিশোরটির নাম ওরান নোলসন। যন্ত্রটি (নিউরোস্টিমুলেটর) ওরানের মস্তিষ্কের গভীরে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠায়, যা তার দিনের বেলার খিঁচুনি ৮০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে।

ওরানের মা জাস্টিন নোলসন বিবিসিকে বলেছেন, যন্ত্র স্থাপনের পর ওরান আগের চেয়ে উৎফুল্ল সময় পার করছে। তার জীবন আগের চেয়ে অনেক ভালো কাটছে।

পরীক্ষার (ট্রায়াল) অংশ হিসেবে গত বছরের অক্টোবরে লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওরানের খুলিতে যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়। তখন ওরানের বয়স ছিল ১২ বছর। এখন তার বয়স ১৩ বছর।

যুক্তরাজ্যের সমারসেটের বাসিন্দা ওরান। তার লেনক্স-গ্যাস্টট সিনড্রোম রয়েছে। এটি মৃগীরোগের একটি মারাত্মক পর্যায়, যা শিশুদের স্নায়ুকে শৈশব থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।

তিন বছর বয়সে ওরানের এই রোগ হয়। তখন থেকে ওরানের দুর্বিষহ ভোগান্তির শুরু। দিনে দুই ডজন থেকে শতাধিকবার পর্যন্ত তার খিঁচুনি হয়েছে।

অস্ত্রোপচারের আগে গত শরতে ওরানের মায়ের সঙ্গে প্রথম কথা বলে বিবিসি। তখন তিনি কীভাবে মৃগীরোগ ওরানের জীবনকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে তার বিবরণ দিয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্যে, এই রোগ ওরানের শৈশব কেড়ে নেয়।

ওরানের মা জাস্টিন বলেছিলেন, তাঁর ছেলের বিভিন্ন ধরনের খিঁচুনি রয়েছে। সে মাটিতে পড়ে যায়। প্রচণ্ডভাবে কাঁপে। জ্ঞান হারায়।

জাস্টিন আরও বলেছিলেন, মাঝেমধ্যে তাঁর ছেলের শ্বাস বন্ধ হয়ে যেত। তখন তাকে বাঁচাতে জরুরি ওষুধের প্রয়োজন হতো।

আরও পড়ুন

ওরানের অটিজম আছে। আছে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি)। বাংলায় এই সমস্যাকে (এডিএইচডি) বলে অতিচঞ্চল অমনোযোগিতা। এটি শিশুর একধরনের স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা।

তবে জাস্টিন বলেন, তাঁর ছেলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মৃগীরোগ। তাঁর তিন বছর বয়সী ছেলেটি ছিল মোটামুটি বুদ্ধিদীপ্ত, সম্ভাবনাময়। কিন্তু খিঁচুনি শুরু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তার অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। সে অনেক দক্ষতা হারিয়ে ফেলে।

আরও পড়ুন

ওরান হলো সিএডিইটি প্রকল্পের একটি অংশ। এই প্রকল্পের আওতায় ক্রমিক পরীক্ষা (ট্রায়াল) চালানো হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য গুরুতর মৃগীরোগীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের গভীরে উদ্দীপনা পাঠানোর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা।

প্রকল্পটিতে গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতাল, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, কিংস কলেজ হাসপাতাল ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীদারত্ব আছে।

পিকোস্টিম নিউরোট্রান্সমিটারটি তৈরি করেছে যুক্তরাজ্যের কোম্পানি অ্যাম্বার থেরাপিউটিকস।

মস্তিষ্কে সব সময়ই বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ ঘটে। মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের বিস্ফোরণ হলে মৃগীরোগীর খিঁচুনি শুরু হয়। যন্ত্রটি অবিরাম বৈদ্যুতিক স্পন্দন পাঠিয়ে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক সংকেতগুলোকে ব্লক বা ব্যাহত করে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন