জানা গেল বিবিসির সেই উপস্থাপকের নাম, আলামত পায়নি পুলিশ
যৌনতাপূর্ণ ছবি পাঠানোর জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ককে অর্থ দেওয়ার অভিযোগ ওঠা বিবিসির সেই উপস্থাপকের (বরখাস্ত) নাম জানা গেছে। তাঁর স্ত্রী এক বিবৃতির মাধ্যমে নাম প্রকাশ করেছেন। এদিকে পুলিশ বলেছে, অভিযোগ তদন্তে তারা কোনো ফৌজদারি অপরাধের আলামত পায়নি।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম হিউ এডওয়ার্ডস। তাঁকে যুক্তরাজ্যে বিবিসির সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী উপস্থাপক হিসেবে ধরা হয়। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সংবাদও বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছানো হয়েছে তাঁর মাধ্যমে। তিনি নির্বাচনের বড় বড় সংবাদ, রাজপরিবারের বিয়ে ও ২০১২ সালে অলিম্পিক আসরে উপস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
হিউ এডওয়ার্ডসের স্ত্রী ভিকি ফ্লিন্ড একটি বার্তা সংস্থার মাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে বলেন, তাঁর স্বামী মারাত্মক মানসিক অবসাদে ভুগছেন। তিনি স্বামীর মানসিক সুস্থতার স্বার্থে ও সন্তানদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে স্বামীর পক্ষ থেকে এই বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে ভিকি বলেন, তাঁর স্বামী কয়েক বছর ধরে মানসিক অবসাদ সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছেন। এ নিয়ে তিনি কয়েকবার চিকিৎসাও করিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁদের কাছে প্রমাণপত্রও রয়েছে।
এদিকে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই উপস্থাপকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্তে কোনো ফৌজদারি অপরাধের আলামত পাওয়া যায়নি। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে এ বিষয়ে তারা আর কোনো পদক্ষেপ নেবে না। তবে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে বিবিসির অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলমান থাকবে।
যুক্তরাজ্যে কারও বিরুদ্ধে আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন না হলে তাঁর নাম প্রকাশে বিধিনিষেধ থাকায় ওই উপস্থাপকের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে ওই উপস্থাপককে বিশ্বব্যাপী পরিচিত মুখ বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। ফলে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলতে থাকে নানা গুঞ্জন। এতে বিবিসির পরিচিত কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মী বিব্রত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। কারণ অনেকে তাঁদের প্রতি সন্দেহ পোষণ করেছেন। এ নিয়ে কয়েকজনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলাদা আলাদাভাবে বলতে দেখা গেছে যে, তাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন।
ভিকি বিবৃতিতে বলেছেন, তাঁর স্বামী গত বৃহস্পতিবার সর্বপ্রথম এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেরেছেন। এরপর থেকে তাঁর মানসিক অবস্থা চরম অবস্থায় পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে তাঁকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। এ সময়জুড়ে সন্তানসহ তাঁদের পুরো পরিবারের ওপর ঝড় বয়ে গেছে।
অভিযোগ নিয়ে যা ঘটেছিল
যুক্তরাজ্যের দ্য সান পত্রিকা গত শুক্রবার ওই অভিযোগের বিষয়টি প্রথম সামনে আনে। এতে ভুক্তভোগীর মা অভিযোগ করেন, তিন বছর আগে থেকে তাঁর সন্তানকে যৌনতাপূর্ণ ছবির জন্য অর্থ দিয়ে আসছেন বিবিসির একজন পুরুষ উপস্থাপক। তিনি তাকে মোট ৩৫ হাজার পাউন্ড দিয়েছেন। যে সময় প্রথম অর্থ দেওয়া শুরু হয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর।
এই অর্থ দিয়ে তাঁর সন্তান নেশা করে এবং সে কোকেনে আসক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই মা। এ ঘটনায় ওই পরিবার ১৯ মে বিবিসির কাছে অভিযোগ করে। কিন্তু এরপরও ওই উপস্থাপককে দায়িত্ব থেকে সরায়নি বিবিসি কর্তৃপক্ষ। সান পত্রিকায় খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়।
বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতিমন্ত্রী লুসি ফ্রেজার রোববার বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভির সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেন। এরপর বিবিসির কর্মীদের কাছে পাঠানো এক ই-মেইলে ওই উপস্থাপককে বরখাস্ত করার কথা জানিয়েছেন টিম ডেভি।