কাখোভকা বাঁধ ধ্বংসে ঝুঁকিতে বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা

বাঁধটি ধ্বংসের কারণে ইউক্রেনের বিশাল এলাকা প্লাবিত। এতে বিশ্বব্যাপী খাদ্যনিরাপত্তায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

রাশিয়ার কাছ থেকে নিজেদের এলাকা পুনরুদ্ধারের পর উল্লাসরত ইউক্রেনীয় সেনারা। গতকাল দোনেৎস্ক অঞ্চলের নেস্কুচনে গ্রামে
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনে নিপ্রো নদীর ওপর নির্মিত নোভা কাখোভকা বাঁধ ধ্বংসের কারণে বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে। খাদ্যপণ্যের দামও বেড়ে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘ এ কথা বলেছে। একই সঙ্গে এই বাঁধ ধ্বংসের ফলে হাজারো মানুষ সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে।

নোভা কাখোভকা জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধের একটি অংশ ৬ জুন দিনের শুরুতে ধসে যায়। এতে এই জলাধারে থাকা প্রায় ১৮ কিউবিক কিলোমিটার পানিতে দক্ষিণ ইউক্রেনের বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হয়।

ঠিক কী কারণে বাঁধটি ধসে গেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে নরওয়ের ভূমিকম্প–বিশেষজ্ঞদের মতে, বিস্ফোরণের মতো কিছু একটা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের তোলা স্যাটেলাইট চিত্রের বরাত দিয়েও একই ধরনের দাবি করা হচ্ছে। অবশ্য বাঁধটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধসিয়ে দেওয়ার জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া পরস্পরকে দোষারোপ করছে।

বাঁধ ধ্বংসের প্রভাব খাদ্যনিরাপত্তার ওপর ব্যাপক হবে বলে মনে করেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথস। তিনি বিবিসিকে বলেন, এটি (ইউক্রেন) হলো রুটির ঝুড়ি—পুরো কৃষ্ণসাগর উপকূল ও ক্রিমিয়া শুধু ইউক্রেন নয়, গোটা বিশ্বের জন্য রুটির ঝুড়ি।

গ্রিফিথস বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে সমস্যার মধ্যে রয়েছি। আর খাদ্যের দাম বাড়তে বাধ্য, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।’

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি প্রায় অনিবার্য যে আমরা আগামী মৌসুমে ফসল কাটা ও বপনের ক্ষেত্রে অনেক বড় ধরনের সমস্যা দেখতে পাচ্ছি। তাই আমরা বিশ্বব্যাপী খাদ্যনিরাপত্তার ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছি আর সেটিই ঘটতে যাচ্ছে।’

ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বে কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী গুরুত্বপূর্ণ দুটি দেশ। গম, বার্লি, ভুট্টাসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য সরবরাহে দেশ দুটি বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে রাশিয়া গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে এই সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়। এতে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

সাত গ্রাম পুনরুদ্ধারের দাবি কিয়েভের

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার দখল থেকে সাতটি গ্রাম পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। গত সোমবার কিয়েভ দাবি করেছে, পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের এই গ্রামগুলো সপ্তাহান্তে পাল্টা হামলা চালিয়ে পুনরুদ্ধার করা হয়।

পশ্চিমা অস্ত্রসহায়তা নিয়ে সম্প্রতি নিজেদের বহুল প্রতীক্ষিত পাল্টা হামলা শুরু করে ইউক্রেন। এ হামলা শুরুর পর পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুতের কাছে অগ্রগতি অর্জনেরও দাবি করেছে ইউক্রেন।

ইউক্রেনের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার টেলিগ্রাম পোস্টে বলেন, সাতটি গ্রাম মুক্ত করা হয়েছে। মালিয়ারের ভাষ্যমতে, গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলের লোবকোভো, লেভান্দে ও নভোদারিভকা।

ইউক্রেনের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, তাঁর দেশের বাহিনী দোনেৎস্ক অঞ্চলের দক্ষিণের স্তোরোজেভ গ্রামও পুনরুদ্ধার করেছে। এর আগে গত রোববার কাছাকাছি আরও তিনটি গ্রাম পুনরুদ্ধার করা হয়।

মালিয়ার বলেন, পাল্টা হামলা চালিয়ে রাশিয়ার দখল থেকে যে ভূখণ্ড (গ্রাম) পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, তার আয়তন ৯০ বর্গকিলোমিটার।

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১১

এদিকে গতকাল ভোররাতে ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় ক্রিভি রিহ শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ও একটি খাদ্যগুদামে এ হামলা চালানো হয় বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই ক্রিভি রিহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

কর্মকর্তারা বলেন, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। বাকি সাতজন নিহত হয়েছেন খাদ্যগুদামে হামলার ঘটনায়। এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আহত হয়েছেন আরও ২৮ জন।