ইউক্রেনে বিধ্বস্ত দোনেৎস্ক অঞ্চল
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রুশ বাহিনীর দখলে থাকা দোনেৎস্ক অঞ্চলে ইউক্রেন বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রুশ সেনাদের নিহত হওয়ার ঘটনায় রাশিয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এ ঘটনার জন্য দায়ী রুশ জেনারেলদের শাস্তি দাবি করেছেন কয়েকজন আইনপ্রণেতা ও রুশ জাতীয়তাবাদী। খবর রয়টার্স ও এএফপির।

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিজেদের সেনা হতাহতের বিষয়ে রাশিয়া খুব একটা তথ্য দেয়নি। গতকাল সোমবার ইউক্রেনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, দোনেৎস্কের মাকিভকা অঞ্চলে একটি রুশ সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চার শতাধিক রুশ সেনা নিহত হয়েছেন।

শুরুতে রাশিয়া হামলার কথা স্বীকার করলেও হতাহতের কথা জানায়নি। পরে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে ৬৩ সেনা নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়। যুদ্ধ শুরুর পর একক হামলায় এত বেশি রুশ সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে আলোচনার বিষয়ে কথাবার্তার মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।

ক্রেমলিন অভিযোগ করছে, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি চারটি মার্কিন হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এই হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।

পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সাবেক কমান্ডার ও জাতীয়তাবাদী সামরিক ব্লগার ইগর গিরকিন বলেন, ‘মাকিভকায় সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শতাধিক রুশ সেনা হতাহত হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সামরিক সরঞ্জামের।’

অন্যদিকে রুশ সামরিক ব্লগার আরকেঞ্জেল স্পেটনাজ টেলিগ্রাম পোস্টে বলেন, মাকিভকায় যা ঘটেছে, তা এককথায় ভয়াবহ। একটি ভবনে একসঙ্গে এত সেনাকে রাখার চিন্তা ভুল ছিল। নিরাপত্তার বিষয়ে কমান্ডারদের উদাসীন থাকা উচিত নয়।

এ ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে রুশ আইনপ্রণেতাদের মধ্যেও। দেশটির সাবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনেট সদস্য গ্রেগরি কারাসিন ইউক্রেন ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলায় জড়িত কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করতে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার দ্বৈরথ, ভুগছে ইউরোপ

রুশ বাহিনীর স্থাপনা লক্ষ্য করে গোলা নিক্ষেপ করছে ইউক্রেন বাহিনী
ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার আইনপ্রণেতা ও সিনেটের সাবেক চেয়ারম্যান সের্গেই মিরোনোভ এ ঘটনায় রুশ বাহিনীর নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেনাদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অবহেলা করেছে।’ এ জন্য তিনি দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, গতকাল সোমবার এক দিনে রাশিয়া রাজধানী কিয়েভসহ দেশটির বিভিন্ন শহরের বেসামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এদিন তারা ৩৯টি রুশ ড্রোন ধ্বংস করেছে। তবে ইউক্রেনে বেসামরিক স্থাপনায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন।

আরও পড়ুন

রাশিয়া থামছে না, দীর্ঘ মেয়াদে ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে হবে: ন্যাটোপ্রধান

ইইউ–ইউক্রেন সম্মেলন

আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অনুষ্ঠিত হবে ইইউ–ইউক্রেন সম্মেলন। সম্মেলনে ইউক্রেন যুদ্ধে আর্থিক ও সামরিক সহায়তার বিষয় নিয়ে কিয়েভের সঙ্গে আলোচনা করবে ইউরোপের দেশগুলো।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দপ্তরের পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন জেলেনস্কি।

আরও পড়ুন

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ৪০০ রুশ সেনাকে হত্যার দাবি ইউক্রেনের

জাপানের সঙ্গে আলোচনায় আপত্তি মস্কোর

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি শান্তি প্রস্তাব সামনে এনেছে জাপান। এ জন্য জাপান সরকার রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী। এ বিষয়ে রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই রুদেনকো বলেন, জাপানের প্রস্তাব তাঁদের স্বার্থের পরিপন্থী। তাই দেশটির সঙ্গে আলোচনায় বসবে না মস্কো।

এদিকে অধিকৃত চার অঞ্চল—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ায় ইউক্রেনের মুদ্রা নিষিদ্ধ করেছে রাশিয়া। গতকাল এ–সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে দেশটি।

আরও পড়ুন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: ২০২৩ সালে যা যা হতে পারে

যুদ্ধ বন্ধের আলামত নেই: ন্যাটোপ্রধান

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের কোনো আলামত আপাতত দেখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় ইউক্রেনকে দীর্ঘ মেয়াদে সহায়তা দেওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে অবশ্যই প্রস্তুত হতে হবে। গতকাল বিবিসি রেডিও ফোরের ওয়ার্ল্ড অ্যাট ওয়ান অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন

নতুন বছরে বিশ্ববাসীর সামনে যত চ্যালেঞ্জ

স্টলটেনবার্গ আরও বলেন, রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। নতুন করে হামলা শুরুর চেষ্টা করতে পারে মস্কো। তবে সামরিক সহায়তার মধ্য দিয়ে সার্বভৌম দেশ হিসেবে ইউক্রেনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যাবে। এতে যুদ্ধের অবসানে আলোচনায় বসতে বাধ্য হবে রাশিয়া।

আরও পড়ুন

নতুন বছরে যুদ্ধ জয়ই লক্ষ্য