কসোভো-সার্বিয়া কি আরেকটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে

কসোভোর একটি থানায় হামলার পর পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। এসব অস্ত্র সার্বিয়া থেকে এসেছে বলে অভিযোগ করেছে কসোভো
ছবি: এএফপি

সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যকার পুরোনো বিরোধ সম্প্রতি আরও বেড়েছে। বিশেষ করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর কসোভোর উত্তরাঞ্চলীয় বাঞ্জস্কায় একটি থানায় সার্ব আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হামলা ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়েছে। দেশ দুটি আরেকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে কি না, এখন সেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

থানায় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার পর বন্দুকধারীরা সীমান্তের একটি ধর্মীয় স্থাপনায় আশ্রয় নেয়। পরে সেখানে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে তিন সার্ব নিহত হন। ১৯৯৯ সালে কসোভো যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এই সহিংসতাকে সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সার্বিয়ার মিত্র রাশিয়া ও চীন জাতিসংঘে কসোভোর সদস্য হওয়া আটকে রেখেছে।

এ ঘটনার জন্য বেলগ্রেড ও প্রিস্টিনা পরস্পরকে দায়ী করে। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুসিস বলেন, কসোভো সরকারের ‘সন্ত্রাস’ দেশটির উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত সার্ব সংখ্যালঘুদের ‘বিদ্রোহের’ দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

অন্যদিকে কসোভোর প্রধানমন্ত্রী আলবিন কুর্তি অভিযোগ করেন, সার্বিয়া ‘সংঘবদ্ধ অপরাধী’ চক্রকে অর্থ ও সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করছে, যারা তাঁর দেশে হামলা চালাচ্ছে।

এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, সীমান্তে নজিরবিহীনসংখ্যক সেনা জড়ো করেছে সার্বিয়া। শান্তিরক্ষী মিশনের আওতায় কসোভোয় ন্যাটো সামরিক জোটের সাড়ে চার হাজার সেনা রয়েছে। পশ্চিমাদের পাশাপাশি কসোভোকে এই সামরিক হুমকি প্রদর্শন এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। যদিও এ উত্তেজনা আর বেশি দূর গড়ায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে ফোনালাপের পর সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, সীমান্ত থেকে কিছু সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এই দফায় ঘটনাটি সামরিক সংঘাতে রূপ নেয়নি ঠিক, কিন্তু এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা উঠে এসেছে। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে কসোভো ইস্যুকে অব্যাহতভাবে ব্যবহার করছে। দ্বিতীয়ত, ভুসিস কসোভোর উত্তরাঞ্চলের মিত্রদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন। তৃতীয়ত, কসোভো-সার্বিয়া আলোচনা গতি হারিয়েছে। এতে উত্তেজনা বাড়তে পারে।

কসোভো ও সার্বিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

দেশে চাপের মুখে ভুসিস

কয়েক মাস ধরে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সার্বিয়ান প্রোগ্রেসিভ পার্টি নিয়ন্ত্রিত মন্ত্রিসভা ক্রমবর্ধমান গণ-অসন্তোষের মুখে পড়েছে। দুটি নির্বিচার গুলির ঘটনার পর থেকে প্রায় প্রতি সপ্তাহে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে।

বিক্ষোভকারীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁরা আগাম নির্বাচনের দাবিও তুলেছেন। অব্যাহত চাপের মুখে ডিসেম্বরেই আগাম নির্বাচন দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ভুসিস।

কসোভোর ঘটনা জনগণের দৃষ্টি সরাতে ভুসিসের জন্য সুযোগ হিসেবে এসেছে। অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে কসোভোর উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত সার্বদের দুর্দশা সামনে নিয়ে আসেন তিনি। একই সঙ্গে রাজনৈতিক মাঠে ঠিকে থাকতে শক্তি প্রদর্শনের কৌশলে ফিরে যান ভুসিস।

আলোচনার সম্ভাবনা ক্ষীণ হচ্ছে

কসোভো ২০০৮ সালে একতরফাভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ৯৯টি দেশ কসোভোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু সার্বিয়া কখনোই কসোভোকে স্বীকৃতি দেবে না বলে অঙ্গীকার করেন ভুসিস। দেশটির মিত্র রাশিয়া ও চীন জাতিসংঘে কসোভোর সদস্য হওয়া আটকে রেখেছে।

কসোভো ও সার্বিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয় পশ্চিমা বিশ্ব। সমঝোতা অনুযায়ী, সংখ্যালঘু সার্ব–অধ্যুষিত এলাকায় স্বশাসনের শর্তে সার্বিয়া কসোভোর স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেবে। তবে দুই পক্ষই নিজেদের শর্ত আগে পূরণের দাবি তোলে। ফলে ফেব্রুয়ারি-মার্চে এ নিয়ে মতৈক্য হলেও এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তি হয়নি।

সর্বশেষ সহিংসতার ঘটনায় সমঝোতার উদ্যোগ আরেক দফা হোঁচট খেল। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষকে ছাড় দিতে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতেও এ ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটবে, সেই সঙ্গে বাড়বে উত্তেজনাও।