পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য ইউক্রেনের

রুশ সেনাদের থেকে ইজিয়াম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা। আকস্মিকভাবে শহরটিতে হাজির হন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পরে সেনাদলের সঙ্গে ছবি তোলেন তিনি। গতকাল খারকিভের ইজিয়ামে।
ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার বাহিনীকে হটিয়ে খারকিভের বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ইউক্রেনের সেনাদের মনোবল এখন চাঙা। এখন তাঁরা পাল্টা হামলা চালিয়ে রাশিয়ার বাহিনীর কাছ থেকে পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকা মুক্ত করতে কাজ করছেন।

বুধবার ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁদের সেনারা এখন পূর্বাঞ্চলের দনবাস এলাকা লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা শুরু করেছেন। এ পরিস্থিতিতে কোণঠাসা রাশিয়ার বাহিনী কয়েকটি অঞ্চল থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।

যদিও এর আগে গত মঙ্গলবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র হামলাসহ সব দিক থেকেই রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করেছেন।

খারকিভ অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর ইজিয়াম থেকে রাশিয়ার বাহিনীকে সম্প্রতি হটিয়ে দিয়ে সেখানে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন ইউক্রেনের সেনারা। তাঁদের মনোবল বাড়াতে গতকাল আকস্মিক সফরে শহরটিতে যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, খারকিভ অঞ্চলে আট হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি অঞ্চল মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁদের সেনারা। এখন তাঁরা মুক্ত করা এসব অঞ্চলে দখল ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুন

ইউক্রেনের এখনো এক-পঞ্চমাংশ এলাকা রাশিয়ার বাহিনীর দখলে। রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দনবাসের কিছু অঞ্চল যুদ্ধ শুরুর পরপরই রাশিয়ার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সেখানকার কয়েকটি শহর মুক্ত করতে লড়াই করছেন ইউক্রেনের সেনারা। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দনবাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হচ্ছে লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক। সেখানকার অধিকাংশ এলাকা রাশিয়া, তথা তাদের মিত্র রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন সরকারকে উৎখাতের কথা বলে ‘সামরিক অভিযান’ চালানোর নির্দেশ দেন। যুদ্ধের শুরুতে রাজধানী কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলে ব্যর্থ হন রাশিয়ার সেনারা। এরপর তাঁরা রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত দনবাস দখলে মনোযোগ দেন।

যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের সামরিক কমান্ডার আন্দ্রে মারোচকো বলেন, লড়াই লুহানস্ক সীমান্তের কাছে পৌঁছে গেছে। লুহানস্ক অঞ্চলের ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রধান সেরহি হাইদাই বলেন, লেমান শহরের উপকণ্ঠে রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে লড়াই চলছে। সেখানে আরও কয়েক দিন লড়াই চলতে পারে।

এর আগে গত মে মাসে লেমান দখল করেন রুশ সেনারা। এটি দোনেৎস্ক শহর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে। শহরটি দখলে নেওয়ার পর ইউক্রেনের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

হাইদাই বলেন, কিছু কিছু এলাকায় রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি চলে এসেছেন ইউক্রেনের সেনারা। বিশেষ করে ইজিয়াম ও কুপিয়ানস্ক মুক্ত করায় সেভেরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্কে রাশিয়ার সেনাদের রসদ সরবরাহ বিঘ্নিত হবে।

অবশ্য ইউক্রেনের পক্ষ থেকে দাবির তথ্য বিবিসি ও রয়টার্স যাচাই করতে পারেনি। তবে গতকাল জেলেনস্কির ইজিয়াম সফরের বিষয়টি প্রমাণ করে, রুশ বাহিনী ওই অঞ্চলে তাদের শক্তি হারিয়েছে।

এদিকে রাশিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তালিকা বাড়ছে। বালাকলিয়া শহরের স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করছেন, রাশিয়ার সেনারা স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে বেসামরিক লোকজনকে নির্যাতন করছেন।

অন্যদিকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের শহরগুলো থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা ক্রেমলিন স্বীকার করেছে। তবে একে পিছু হটা বলতে নারাজ তারা। আবার আক্রমণের জন্য সেনা জড়ো করার কথা জানিয়ে গত সোমবার মস্কো বলেছে, লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের অভিযান চলতে থাকবে।

তবে ইউক্রেনের সেনাদের আকস্মিক হামলার মুখে রাশিয়ার অনেক সেনা সামরিক পোশাক ছেড়ে জনসাধারণের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন বলে কয়েকটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা টেলিফোনে কথা বলেন। ওই আলোচনায় পুতিনকে দ্রুত ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুন

জার্মান সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, শলৎজ পুতিনকে দ্রুত কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার কথা বলেন। এ জন্য তিনি যুদ্ধবিরতি, রাশিয়ার সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার ও ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর কথা বলেন।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে দেশটির সেনারা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছেন। তবে এই অগ্রগতিকে সফলতা হিসেবে দেখলেও পুরো বিজয় অর্জনের জন্য এখনো অনেক পথ বাকি বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, সামনের দিনগুলোতে ইউক্রেনের জন্য আরও সামরিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন মুখপাত্র বলেছেন, রুশ সেনারা খারকিভ এলাকায় আত্মরক্ষামূলক অবস্থায় রয়েছেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন