পুতিন কোন পথে যাবেন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নির্বাচনের এ ফল নিয়ে কখনোই সন্দেহ ছিল না। কিন্তু পশ্চিমা গণমাধ্যমের চোখে এ ভোট ছিল সন্দেহজনক। এবারের নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা পঞ্চমবার ক্ষমতায় আসীন হচ্ছেন পুতিন।

রাশিয়ার তিন দিন ধরে চলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট কখনোই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে পুতিনের এ নিরঙ্কুশ বিজয় তাঁকে একাধারে যেমন শাসনের বৈধতা দেবে, তেমনি ইউক্রেন যুদ্ধে জনগণ যে তাঁর সঙ্গে আছে সে বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দেবে।

আরও পড়ুন
ভ্লাদিমির পুতিন

নির্বাচনের আগে জনগণের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন ভোটারদের জাতীয় ঐক্য দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি রাশিয়ার জনগণকে একটি বড় পরিবার বলে মন্তব্য করেছিলেন। ভোট শেষ হওয়ার পরও পুতিন একই বার্তার পুনরাবৃত্তি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই এক দল। সব রুশ নাগরিক ভোট দিয়েছেন।’ তবে পুতিন অস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়ে বলছেন, ‘সামনে অনেক কাজ বাকি।’ কিন্তু সেই বাকি কাজগুলো কী কী ভোটের আগে সে বিষয়ে তিনি নীরব ছিলেন।

নির্বাচনের আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্বাচন–পরবর্তী সরকারে পরিবর্তনের প্রশ্ন এড়িয়ে যান পুতিন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন তাঁর পদে থাকবেন কি না। পুতিন বলেন, নির্বাচনের পরে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন। এখন এ বিষয়ে কথা বলা ঠিক নয়। কিন্তু সব দিক বিবেচনায় সরকার সন্তোষজনক কাজ করে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি। রাশিয়া, ১৮ মার্চ
ছবি: এএফপি

কিন্তু এখন রাশিয়ার জন্য বড় প্রশ্ন হচ্ছে, পুতিনের জয়ের পর কী হতে চলেছে? ক্রেমলিনে কী পদের বড় ধরনের রদবদল হবে? পুনর্নির্বাচিত পুতিনের হাতে আসল কাজগুলো কী কী?

রাশিয়া পর্যবেক্ষকদের চোখে কয়েকটি বড় বিষয় ধরা পড়েছে। এর একটি হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের ইচ্ছার প্রতিফলন। এ ভোট পুতিনকে ইউক্রেনে নতুন কৌশল খাটানোর সুযোগ দেবে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের বাখমুত ও আভদিভকা শহরে নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার হাতে এসেছে। পুতিন যুদ্ধক্ষেত্রের অগ্রগতি নিয়ে আস্থাবোধ করছেন। পশ্চিমারা ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা পাঠাতে দ্বিধায় রয়েছে। এখন নির্বাচনে জয় পাওয়ায় পুতিন আরও কঠোর বার্তা দিতে পারবেন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের মূল্য দিতে হয়েছে রাশিয়াকে। অনেক সেনা হারাতে হয়েছে রাশিয়ার। জল্পনা রয়েছে, পুতিন ও তাঁর জেনারেলদের নির্বাচনের পর নতুন করে সেনা জমায়েতের দিকে নজর দিতে হবে। পুতিন কীভাবে দেশটির জনবল সমস্যা মোকাবিলা করবেন সেটিও তাঁর বর্তমান এজেন্ডায় থাকবে। এ ছাড়া দেশের ভেতরে পুতিনের বিরোধী যাঁরা আছেন, তাদের ওপর দমনপীড়ন তিনি চালিয়ে যেতে পারবেন।

পুতিন সাধারণত তাঁর সমালোচক নাভালনির নাম মুখে নেন না। কিন্তু নির্বাচনে জয়ের পর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি নাভালনির মৃত্যুকে দুঃখজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। গত মাসে রাশিয়ার একটি কারাগারে আকস্মিক মারা যান নাভালনি। এ প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ‘নাভালনির বিষয়ে বলতে গেলে, তিনি আর নেই। এটা দুঃখজনক ঘটনা। কারাগারে মারা যাওয়ার আরও ঘটনা আছে। যুক্তরাষ্ট্রে কি এ ধরনের ঘটনা ঘটে না? সেখানেও ঘটে। তা শুধু একবারই নয়।’

নির্বাচনপরবর্তী সময়ে পুতিন কোন পথে হাঁটবেন তা ধারণা করা কঠিন। পুতিনের বর্তমান অর্থনীতি স্বল্প মেয়াদের নিষেধাজ্ঞা হয়তো সইতে পারবে। তাঁর গোলাবারুদ কারখানাগুলো পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় বেশি উৎপাদন করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারেকাছেও নেই কেউ।