বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক এম-১ আব্রামস ট্যাংকে কি রুশ সুরক্ষাবলয় ভাঙবে

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম-১ আব্রাহামস ট্যাংক
ফাইল ছবি : এএফপি

ইউক্রেনের হাতে সময় বেশি নেই। আসছে বর্ষা ও শীতকাল। এতে চরম বাধার মুখে পড়তে পারে দেশটির পাল্টা হামলা। যদিও রাশিয়ার দখল করা ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো মুক্ত করতে এ হামলায় তেমন কোনো অগ্রগতি আসেনি। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিয়েভ। এরই মধ্যে সুখবর হলো, আগামী সপ্তাহে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক এম-১ আব্রামস ট্যাংক পাচ্ছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে দেখা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানেই আব্রামস ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। নতুন করে সামরিক সহায়তার ঘোষণাও এসেছে তাঁর কাছ থেকে। এবারের সহায়তার পরিমাণ ৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যুদ্ধের পর আগেও একবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন জেলেনস্কি।

ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রতিরক্ষাবলয় ভাঙতে হিমশিম খাচ্ছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। প্রচলিত অস্ত্রগুলো দিয়ে তেমন সুবিধা করে উঠতে পারছেন না। এরই মধ্যে আব্রামস ট্যাংক হাতে পেলে তা ইউক্রেনের জন্য কতটা সুবিধার হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগতে পারে। আগ্রহ জন্মাতে পারে নতুন সামরিক সহায়তায় কী কী থাকছে, তা নিয়েও।

আব্রামস ট্যাংক কি কাজে লাগাতে পারবে ইউক্রেন

এম-১ আব্রামসকে বিবেচনা করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক ট্যাংকগুলোর একটি হিসেবে। যুদ্ধে ইউক্রেন ও রাশিয়া সোভিয়েত আমলের যেসব ট্যাংক ব্যবহার করছে, সেগুলো থেকে আব্রামস অনেক শক্তিশালী। চলতি বছরের শুরুতেই ইউক্রেনকে ৩১টি এই ট্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে পরে তারিখে পরিবর্তন এনে বছরের শেষের দিকের কথা বলা হয়।

এই ট্যাংক দেওয়াটা ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তে বড় বাঁকবদল হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন, আব্রামস ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ, এ ট্যাংকের জ্বালানি, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার প্রক্রিয়াটা খুবই জটিল। আর এ ট্যাংক চালানোর পদ্ধতিও সহজ নয়।

চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংকের ব্যারেল থেকে ছোড়া হচ্ছে ডিপ্লিটেড ইউরেনিয়ামসমৃদ্ধ গোলা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

‘ব্রেকিং ডিফেন্স’ নামের একটি ডিজিটাল সাময়িকীর কন্ট্রিবিউটিং এডিটর সিডনি ফ্রিডবার্গ চলতি বছরের শুরুর দিকে আল-জাজিরাকে বলেছিলেন, যেহেতু এই ট্যাংক ইউরোপে কম ব্যবহৃত হয়, তাই এটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের প্রাপ্যতা, এটি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ইউক্রেন সমস্যায় পড়তে পারে। আর ট্যাংকটি চালাতে চারজনের প্রয়োজন। এটিও একটি জটিল বিষয়।

আরও পড়ুন

তবে এ সমস্যা সমাধানের জন্য ইউক্রেনীয়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপ ও আফ্রিকায় মার্কিন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল মার্টিন ও’ডোনেলের গত মাসে দেওয়া এক বক্তব্যের বরাতে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানিয়েছে, ২০০ ইউক্রেনীয় সেনা আব্রামস ট্যাংক চালানোর প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছেন।

আগামী সপ্তাহে ইউক্রেনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে আব্রামস ট্যাংকগুলোর। এগুলোতে ব৵বহারের জন্য ‘ডিপ্লিটেড ইউরেনিয়ামের’ তৈরি ১২০ মিলিমিটারের গোলা দেওয়া হবে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে এই ইউরেনিয়াম পাওয়া যায়। এ দিয়ে তৈরি গোলাগুলো সুরক্ষাবলয় ভেদ করতে পারে। তবে ডিপ্লিটেড ইউরেনিয়ামের গোলা ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এর আগে বিভিন্ন যুদ্ধে এই গোলা ব্যবহারের পর সেখানে ক্যানসার, জন্মগত ত্রুটিসহ নানা শারীরিক সমস্যা দেখা গেছে।

আল-জাজিরার প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষক আলেক্স গাতোপোউলোস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আব্রামস ও জার্মানির তৈরি লেপার্ড-২-এর মতো নতুন প্রজন্মের ট্যাংকগুলো রাশিয়ার প্রতিরক্ষাবলয় ভেঙে দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ ইউক্রেনের সমতল ভূমি ট্যাংক চলাচলের জন্য উপযুক্ত। তবে এ অঞ্চলে মাসের পর মাস ধরে পরিখা ও বাংকার বানিয়ে এবং মাইন পুঁতে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে রুশ বাহিনী। তাই এখনই ইউক্রেনকে আব্রামস ট্যাংক দেওয়ার উপযুক্ত সময়।

ইউক্রেনের ট্যাংক ঠেকাতে কংক্রিটের তৈরি ‘ড্রাগনের দাঁত’ পুঁতেছে রাশিয়া
ছবি: রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চলের গভর্নরের দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগের সৌজন্যে
আরও পড়ুন

নতুন সামরিক সহায়তায় কী কী অস্ত্র থাকছে

বাইডেনের ঘোষণা দেওয়া নতুন অস্ত্রসহায়তায় থাকছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, হিমার্স রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার গোলাবারুদ, ট্যাংক-বিধ্বংসী অস্ত্র ও কামানের গোলা। এ ছাড়া বিতর্কিত গুচ্ছ বোমাও দেওয়া হচ্ছে ইউক্রেনকে। এই বোমার অনেকাংশ অবিস্ফোরিত থেকে যেতে পারে, যা বেসামরিক লোকজনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি করে।

তবে নতুন সহায়তায় ইউক্রেনকে দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়া হচ্ছে না। এ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এ ধরনের অস্ত্র পেতে বহু আগে থেকেই আরজি জানিয়ে আসছিল কিয়েভ। কারণ, এটি দিয়ে যুদ্ধের সম্মুখসারির ভেতরে রুশ সরবরাহ পথ ও রসদে হামলা চালাতে পারবে তারা।

আরও পড়ুন

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনকে ১১৩ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও মানবিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে জেলেনস্কি বলেন, এবারের পাওয়া অস্ত্রগুলো খুবই শক্তিশালী এবং ইউক্রেনের সেনাদের এখন ঠিক যেমনটি দরকার, তেমন অস্ত্রই পাওয়া গেছে।

শীতকালের আগে অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, তিনি শুধু নতুন অস্ত্র সহায়তার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ দেবেন না, যুদ্ধের ৫৭৫ দিন ধরে ওয়াশিংটনের কিয়েভের পাশে থাকাটাও ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখে।

আরও পড়ুন