পুতিনের নিরঙ্কুশ বিজয় ছিল অনুমেয়, কিন্তু এরপর কী

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৭৪ শতাংশের বেশি। এ ভোটের ৮৭ দশমিক ২৮ শতাংশ পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এই বিপুল জনসমর্থন নিয়ে পুতিন কী করবেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের পঞ্চম মেয়াদটা কেমন হবে—এসব বিষয় নিয়ে নিজের ভাবনা লিখেছেন বিবিসির রাশিয়া সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ভ্লাদিমির পুতিন আজ সোমবার মস্কোয় নিজের প্রচার শিবিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হনছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল কী হবে, সে আলোচনায় ভ্লাদিমির পুতিনের বিপুল বিজয়ের ধারণা করাটা ছিল খুবই সহজ ব্যাপার। এর জন্য আতশি কাচ দিয়ে ভবিষ্যৎ গণনার দরকার ছিল না। রাশিয়ায় নির্বাচনসহ পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিনের।

কিন্তু নির্বাচনে নিজের পক্ষে ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়ে যে বিপুল বিজয় পুতিন পেয়েছেন, তা দিয়ে তিনি কী করবেন? প্রেসিডেন্ট পুতিনের পঞ্চম মেয়াদটা কেমন হবে?

পুতিন ৫.০ হয়তো পুতিন ৪.০–এর চেয়ে খুব একটা ভিন্ন না–ও হতে পারে।

এমন বিশেষ কোনো মুহূর্ত আশা করবেন না, যেখানে জাদুর কাঠির ছোয়ায় বাজপাখি হঠাৎ শান্তির প্রতীক কবুতরে রূপ নেবে।

বিদেশে সংঘাত ও দেশে দমন–পীড়নের যে ধারা পুতিন চালিয়ে আসছেন, সেটাই অব্যাহত রাখার আশঙ্কা রয়েছে।

সামনে কী হবে, সে ভাবনায় সম্ভবত ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং পশ্চিমের সঙ্গে বৈরিতার সঙ্গে রাশিয়ার ভেতরে একটি আদর্শিক প্রচারণা চালাতে দেখা যাবে। সেটা হলো রুশ সমাজে সামরিক মনোভাব আরও চাঙা করা। পুতিন এটাই করতে চাচ্ছেন।

রাশিয়ার নাগরিক সমাজের বিষয়ে বলা যায়, ইতিমধ্যে কঠোর চাপের মুখে রয়েছে তারা। এই চাপ আরও বাড়বে বলেও অনুমান করা যায়।

৮৭ শতাংশ একটি বিরাট সংখ্যা। তবে সত্যি কথা হচ্ছে, এই সংখ্যা পশ্চিমা নেতাদের বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হবে না যে ভোটের এই ফলের মধ্য দিয়ে পুতিনের বর্তমান জনপ্রিয়তার মাত্রা যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইতিমধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বলেছেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, এটা তা নয়।’

তবে রাশিয়ার ভোটের এই ফলে দেশের ভেতর ক্রেমলিন জোরের সঙ্গে এ কথা বলতে পারবে যে ভ্লাদিমির পুতিনকে ঘিরে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রতি তাঁর দেশের জনগণের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হচ্ছে, পুতিন এখন দাবি করতে পারবেন যে ইউক্রেনে তাঁর যুদ্ধ এবং যেভাবে তিনি রাশিয়াকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তার পক্ষে জনগণের সমর্থন রয়েছে।

৮৭ শতাংশ ভোট রাশিয়ার রাজনৈতিক অভিজাত ব্যক্তিদের কাছেও একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়। তা হলো, ‘বিশেষভাবে খেয়াল করুন, এখানে একজনমাত্র ব্যক্তি দায়িত্বে আছেন, সবকিছুতে তাঁর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং খুব শিগগির এর পরিবর্তন ঘটছে না।’

আর ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী ভাগনার গ্রুপের ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু নাটকীয় বিদ্রোহের এক বছরের কম সময়ের মধ্যে এটাই পুতিনের জন্য প্রয়োজন ছিল। ভাগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের নেতৃত্বে ওই বিদ্রোহ পুতিনের কর্তৃত্বের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রেমলিনের নেতাই সর্বময় ক্ষমতা নিয়ে আবির্ভূত হন। বিদ্রোহের দুই মাস পর প্রিগোশিনের মৃত্যু হয়, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন তিনি।

৮৭ শতাংশের আরেকটি দিক হচ্ছে, এটা ব্যাপকভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। যখন আপনি একজন প্রেসিডেন্ট এবং আপনাকে বলা হলো, আপনি আরেকবার ভূমিধস বিজয় পেয়েছেন। এটা আপনার মধ্যে নিজেকে আরও ক্ষমতাশালী, এমনকি অপরাজেয় ভাবার অনুভূতি তৈরি করতে পারে।

রোববার রাতে পুতিনের বিজয়ের খবর যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে, সেখানে এমনটাই হওয়ার কথা। এই আত্মবিশ্বাস এমন একজন নেতার, যিনি ইতিমধ্যে সিকি শতাব্দী ধরে দেশের ক্ষমতায় আছেন এবং ক্যাথেরিন দ্য গ্রেটের পর রাশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের শাসক হতে চলেছেন।

এটা এমন এক নেতার আত্মবিশ্বাস, যিনি একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন, যেটা তাঁকে ৮৭ শতাংশ ভোট এবং পঞ্চম দফায় প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ এনে দিয়েছে।

পুতিন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অগ্রগতির কথা বলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, সম্পূর্ণভাবে তাঁর দেশের স্বার্থে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি পশ্চিমা গণতন্ত্রের সমালোচনা করেছেন। তিনি এ কথাও বলেছেন, নির্বাচনোত্তর রাশিয়া আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

সমালোচকেরা বলে থাকেন, কোনো নেতার মধ্যে রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাস বিশেষ করে অতি আত্মবিশ্বাস তৈরি হলে তা বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষত একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নজরদারি ও ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকলে এটার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বর্তমানের রাশিয়ায় এমন কিছুই ঘটছে।