মুঠোফোন ব্যবহারের কারণেই মাকিভকাতে রুশ সেনাদের ওপর হামলা

মাকিভকাতে হামলায় বিধ্বস্ত ভবন
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনের মাকিভকাতে নববর্ষের প্রথম প্রহরে তাদের একটি অস্থায়ী সেনা ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় নিহত রুশ সেনার সংখ্যা বেড়ে ৮৯-তে দাঁড়িয়েছে।

রুশ সেনাদের মুঠোফোন ব্যবহারের কারণে শত্রুপক্ষ হামলাটি চালাতে পেরেছে বলে মনে করছে মস্কো। যদিও সেনাদের ফোন ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। দেশটি বলছে, এর মধ্য দিয়েই শত্রুপক্ষ রুশ সেনাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছে। খবর বিবিসির।

১ জানুয়ারি (গত ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে) দোনেৎস্ক অঞ্চলের মাকিভকাতে ইউক্রেনীয় বাহিনী একটি কারিগরি কলেজের ওপর হামলা চালায়। কলেজটিকে রুশ সেনারা অস্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল।

বুধবার ভোরে এক টেলিগ্রাম পোস্টে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, হামলায় রেজিমেন্টের উপকমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল বাচুরিনও নিহত হয়েছেন। হামলার ঘটনাটি নিয়ে একটি কমিশন তদন্ত করছে বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

রাশিয়া বলছে, সেনাদের মুঠোফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। তারপরও তাঁদের অনেকেই তা ব্যবহার করেছেন। আর এর জন্যই হামলা সম্ভব হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনীয় গোলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে, এমন এলাকায় রুশ সেনাদের ব্যাপক হারে মুঠোফোন ব্যবহারের কারণে যে এ ধরনের হামলা সম্ভব হয়েছে, তা ‘ইতিমধ্যে নিশ্চিত’।

এর মধ্য দিয়ে শত্রুপক্ষ রুশ সেনাদের অবস্থান শনাক্ত করে এটিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্যবস্তু করতে পেরেছে। বিবৃতিতে রুশ কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, তদন্তে যেসব কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত হবেন, তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। ভবিষ্যতে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

হামলার সময় কারিগরি কলেজটি রুশ সেনাদের উপস্থিতিতে ভরপুর ছিল। গত সেপ্টেম্বরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আংশিক সেনা নিযুক্তির ঘোষণা অনুযায়ী যে তিন লাখ রিজার্ভ সেনাকে (আপৎকালীন মজুত সেনা) তলব করা হয়েছিল, তাঁদের অনেকেও সেখানে ছিলেন।

আরও পড়ুন

এ হামলায় নিহত রুশ সেনার সংখ্যা নিয়ে দুই পক্ষ আলাদা আলাদা তথ্য দিয়েছে। ইউক্রেন বলছে, হামলায় ৪০০ রুশ সেনা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছে ৩০০ জন। রাশিয়া শুরুতে ৬৩ সেনা নিহত হওয়ার কথা বলেছিল। এখন তারা বলছে, মাকিভকার হামলায় নিহত রুশ সেনার সংখ্যা ৮৯।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনা নিহতের সংখ্যা নিয়ে তারা কোনো পক্ষের দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া তাদের সেনাদের প্রাণহানির ব্যাপারে যে তথ্য দিয়েছে, তার বিবেচনায় এটি সর্বোচ্চসংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা।

রাশিয়া বলছে, নববর্ষের প্রথম প্রহর অর্থাৎ রাত ১২টা ১ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের হিমার্স রকেটব্যবস্থা ব্যবহার করে কারিগরি কলেজটিতে ছয়টি রকেট ছোড়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি রকেট তারা ভূপাতিত করতে পেরেছে।

ঘটনাস্থলের কাছে গোলাবারুদ মজুত করা ছিল। হামলায় সেগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।
রাশিয়ার বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ এ হামলার ঘটনায় সেনাবাহিনীর অযোগ্যতাকে দায়ী করেছেন। তাঁরা বলছেন, সেনাদের এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় রাখা ঠিক হয়নি।

দোনেৎস্কে রাশিয়া–সমর্থিত কর্তৃপক্ষের সাবেক শীর্ষ নেতা পাভেল গুবারেভ বলেছেন, একটি ভবনে বিপুল সেনা অবস্থানের সিদ্ধান্তটি ‘শাস্তিযোগ্য অবহেলা’র ঘটনা। এর জন্য যদি কাউকে শাস্তি না দেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি শুধু খারাপই হবে।

ন্যাশনাল গার্ডের নিহত সেনাদের পরিবারকে ৫০ লাখ রুবল করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।