বসনিয়ায় যে ক্যাফেতে ডাউন সিনড্রোমের মানুষ কাজ করেন

বসনিয়ার ‘ড্রাগনস হার্ট ক্লাব’ ক্যাফেতে কাজ করেন ডাউন সিনড্রোম থাকা মানুষেরাছবি: ডয়চে ভেলে

বসনিয়ার সাশা সুনিয়াকের কাছে তাঁর চাকরিই সব৷ তিনি ‘ক্লাব স্মায়েভো সারসা’ বা ‘ড্রাগনস হার্ট ক্লাব’ ক্যাফেতে কাজ করেন৷ সাশার হৃদয়টা একজন যোদ্ধার মতো। কখনো হাল ছাড়েন না, এমনকি কঠিন সময়েও৷ কাজ নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগে, আনন্দ হয়৷ এখানে কাজ করতে ভালোবাসি, আমার সব সময় ভালো লাগে! কোনো বিশ্রাম না নিয়ে আমি ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে পারব।’

সাশার সহকর্মী বরিস কুসুমোভিচ কথা বলতে পারেন না, কিন্তু তাতে সমস্যা নেই৷ তিনি এমনকি ক্যাফেতে একটি বিছানা রাখতে চেয়েছিলেন, যেন রাতটা সেখানেই কাটাতে পারেন৷

সাশা, বরিস—দুজনই ভাগ্যবান৷ বসনিয়ায় এমন ক্যাফে একটিই আছে, যেখানে তাঁরা কাজ করতে পারছেন৷

স্মায়েভো সারসা অ্যাসোসিয়েশনের ওমর ইসোভিচ বলেন, ‘তাঁদের চেহারার দিকে তাকালে, তাঁদের পরিবারের দিকে তাকালে আপনি বুঝবেন, এই ক্যাফে তাঁদের যেন দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে উঠেছে৷ তাঁদের মা-বাবারা বলছেন, তাঁদের সন্তানেরা আগে কখনো এতটা আনন্দে ছিলেন না।’

তবে বসনিয়ায় ডাউন সিনড্রোম মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য চালু এই প্রকল্প শুরুতে ব্যর্থ হতে চলেছিল৷ কারণ, প্রথম কয়েক মাস অতিথি তেমন পাওয়া যাচ্ছিল না। পাশের ক্যাফেতে অনেকে গেলেও ড্রাগনস হার্টে কেউ যেতেন না৷

ডাউন সিনড্রোম একটি জেনেটিক রোগ। সাধারণ মানুষের ক্রোমোজোমের চেয়ে এদের ক্রোমোজোমের গঠন ভিন্ন হয়ে থাকে। এই রোগে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে। ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক তরুণের গড় আইকিউ ৫০, যা ৮-৯ বছরের সুস্থ শিশুর সমান। অনেকে অটিজমের সঙ্গে ডাউন সিনড্রোমকে গুলিয়ে ফেলেন।

বসনিয়ার ড্রাগন হার্ট ক্যাফে শুরুতে ভালো না চললেও এডিমা এফেনডিচ-জিনিচ শুরু থেকেই সেখানে যেতেন। কারণ, তিনি সাশাকে ছোটবেলা থেকেই চিনতেন। তাই প্রায় প্রতিদিনই সাশার ক্যাফেতে যেতেন। কয়েক সপ্তাহ আগের এক শনিবারে তিনিই একমাত্র অতিথি ছিলেন। ওমর তাঁর ছবি তুলেছিলেন।

এডিমা এফেনডিচ-জিনিচ বলেন, ‘আমি জানতাম না, ওমর ছবি তুলেছিলেন৷ একদিন উনি আমাকে বলছিলেন, উনি ক্লাবটা এ মাসের শেষে বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেবেন৷ আমি বলেছিলাম, এমন করতে হবে না৷ তিনি বলেছিলেন, এভাবে চালানো সম্ভব নয়৷’

ওমর ইসোভিচ বলেন, ‘বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর সব বদলে যায়। প্রথমে স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, তারপর জাতীয় গণমাধ্যমে। হঠাৎ করেই সকাল–সন্ধ্যা সব সময় আমরা ক্রেতা পাওয়া শুরু করি। প্রথম দুই–তিন সপ্তাহ টেবিল পাওয়া সহজ ছিল না৷’

ওটা ছিল অবিশ্বাস্য৷ এরপর থেকে খুব ভালো চলছে। ক্রেতারাও প্রশংসা করছেন। এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি আপনাকে বলছি, এটা অন্যতম সেরা ক্যাফে! খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আর সার্ভিসও উঁচুমানের।’

আরেক ক্রেতা বলেন, ‘প্রথমে খুব অবাক হয়েছিলাম৷ আশা করিনি, কিন্তু তাতে কী! আমার মনে হয়, তারা আমাকে ও অন্য অতিথিদের অন্যান্য জায়গার চেয়ে একটু বেশি সম্মান ও বন্ধুত্বপূর্ণ সেবা দিয়েছেন৷’

এখন অন্য এলাকায়ও এমন ক্যাফে খোলা হচ্ছে।