রাশিয়া–চীনের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে ইউরোপে শঙ্কা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পতাকাফাইল ছবি: রয়টার্স

সম্প্রতি ইউরোপীয় সংসদ, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে রাশিয়া ও চীনের গুপ্তচরবৃত্তির কয়েকটি অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। এমন অবস্থায় আগামী জুনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নির্বাচনে দেশ দুটির হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা৷

ইউরোপীয় সংসদের সদস্য ও তাদের কর্মীরা কাতার, মরক্কো ও মৌরিতানিয়ার কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন বলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ইউরোপীয় সংসদের ওপর ওই তিন দেশের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় এমন লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে৷

লাটভিয়ার ইউরোপীয় সংসদ সদস্য টাটিয়ানা আশডানোকা কয়েকবছর ধরে রুশ গোয়েন্দাদের সঙ্গে কাজ করছেন বলে এ বছরের শুরুতে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

গত মাসে চেক প্রজাতন্ত্র ‘ভয়েস অব ইউরোপ’ নামের একটি নিউজ আউটলেট নিষিদ্ধ করে। তাদের কার্যক্রমে রাশিয়ার প্রভাব ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এর কয়েকদিন পর বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘রুশ প্রোপাগান্ডা প্রচার করতে’ ইউরোপীয় সাংসদদের অর্থ দিয়েছে রাশিয়া।

আর চলতি সপ্তাহে জার্মানির উগ্র ডানপন্থী ইউরোপীয় সংসদ সদস্য মাক্সিমিলিয়ান ক্রাহরের সহকারী জিয়ান জি–কে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়। জার্মানির নাগরিক জিয়ান জি চীনা গোয়েন্দাদের হয়েও কাজ করতেন বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ৷

বুধবার ক্রাহর বিরুদ্ধেও প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। সম্প্রতি জার্মান ও চেক প্রজাতন্ত্রের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশপন্থী বার্তা প্রচার করতে তিনি অর্থ নিয়েছেন৷ তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্রাহ৷

এদিকে এই সপ্তাহে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তারা চীনের হয়ে কাজ করছিলেন বলে অভিযোগ৷ বেইজিং এই অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে৷

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর প্রথম ১১ মাসে ৪৯০ জন রুশ কূটনীতিককে ইইউর বিভিন্ন দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল৷ তাদের বেশিরভাগই গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়৷ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এসব তথ্য জানিয়েছিল ‘পোলিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স’ বা পিআইএসএম।

পিআইএসএমের কর্মকর্তা এলসবিয়েটা কাসা বলেন, পুরো ইইউ জুড়ে রুশ গুপ্তচরবৃত্তি চললেও ‘ইউরোপের যেসব দেশে ন্যাটোর অবকাঠামো ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদরদপ্তর রয়েছে সেসব দেশে তারা বেশি সক্রিয়।’

ইইউর বেশিরভাগ সংস্থা ও ন্যাটোর সদরদপ্তর বেলজিয়ামে অবস্থিত। দেশটির প্রধানমন্ত্রী গত সপ্তাহে এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘আমরা যখন কথা বলছি তখনও ইইউর নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ঘটে চলেছে। তারা আমাদের গণতন্ত্রকে ব্যাহত করতে চায়।’

সুইডিশ ডিফেন্স রিসার্চ এজেন্সি বলছে, ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যত ইউরোপীয় নাগরিক গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগের সঙ্গে মস্কোর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে৷

কী ভাবছে ইইউ সংসদ

গুপ্তচরবৃত্তি ঠেকাতে ইউরোপীয় সংসদ সদস্যরাষ্ট্রগুলোর নিজস্ব কর্তৃপক্ষের তদন্তের ওপর নির্ভর করে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন ইইউ সংসদের একজন মুখপাত্র।

ওই মুখপাত্র বলেন, ইউরোপের রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ক্রেমলিনের প্রচার বাড়াতে সহায়ক হওয়ার অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে ইইউ সংসদ। চীনের হস্তক্ষেপের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি৷

এদিকে রাশিয়ার কার্যক্রমের প্রভাব কমাতে ইইউ সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমন্বয় আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে এক চিঠিতে লিখেছেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী ক্রো ও চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পেটার ফিয়ালা। এছাড়া প্রয়োজনে আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও পরামর্শ দেন তারা। সম্প্রতি গঠন করা ‘ইউরোপিয়ান পাবলিক প্রসিকিউটর্স অফিস’ এসব কার্যক্রমের বিচার করতে পারে কিনা, তা–ও খতিয়ে দেখতে বলেছেন তারা।

ইইউর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কাউন্টার-টেরোরিজম বিষয়ে সহযোগিতা বাড়লেও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়টি এখনও অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করা হয়।

এই বিষয়ে উন্নতির জায়গা রয়েছে বলে মনে করেন পিআইএসএম কর্মকর্তা এলসবিয়েটা কাসা। এক্ষেত্রে ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে কাজ করা সংস্থা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷