গণভোট শেষ, রাশিয়াতে যোগ দেওয়ার পক্ষে ‘বিপুল ভোটের’ আভাস

ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে চলছে গণভোট
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রুশ বাহিনীর দখলে থাকা ইউক্রেনের চার অঞ্চলে গণভোট শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। গত শুক্রবার শুরু হয়ে পাঁচ দিন চলে এই ভোট গ্রহণ। ভোটে ওই অঞ্চলগুলোর অধিকাংশ বাসিন্দা রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন বলে রুশ গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে। ভোটের ফল প্রকাশ করা হতে পারে বুধবার। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আগামী শুক্রবারই ভোট হওয়া অঞ্চলগুলোকে রুশ ফেডারেশনে যুক্ত করার ঘোষণা দিতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ইউক্রেন যুদ্ধে সম্প্রতি যখন রুশ সেনাদের নাস্তানাবুদ হওয়ার খবর আসছিল, তখন আচমকাই ওই অঞ্চলগুলোতে গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেয় ক্রেমলিন। সে অনুযায়ী আপাতত খেরসন, জাপোরিঝঝিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে ভোট হচ্ছে। এ অঞ্চলগুলো পুরোপুরি বা আংশিক মস্কোর নিয়ন্ত্রণে।

ইউক্রেনের চার অঞ্চলে গণভোটে বিপুল ভোট পড়ার খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আল-জাজিরার সংবাদদাতা মোহাম্মদ ভাল। মস্কো থেকে তিনি বলেন, দোনেৎস্কে ৮৭ শতাংশ, লুহানস্কে ৮৩ শতাংশ, খেরসনে ৬৬ শতাংশ ও জাপোরিঝঝিয়ায় ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে মঙ্গলবার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার ভোট গণনা হতে পারে। সন্ধ্যায় রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডুমায় গণভোটের ফল প্রকাশ করা হতে পারে।

ভোটাভুটির ফল নিজেদের পক্ষে গেলে অঞ্চলগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হতে পারে। তবে ফল কী হবে, তা আগে থেকেই ক্রেমলিন ঠিক করে রেখেছে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির পশ্চিমা মিত্রদের। শুরু থেকে তারা এ ভোটকে ‘ভাঁওতাবাজি’ আখ্যা দিয়েছে।  

‘বিপুল ভোট পড়েছে’

ইউক্রেনের চার অঞ্চলে গণভোটে বিপুল ভোট পড়ার খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আল–জাজিরার সংবাদদাতা মোহাম্মদ ভাল। মস্কো থেকে তিনি বলেন, দোনেৎস্কে ৮৭ শতাংশ, লুহানস্কে ৮৩ শতাংশ, খেরসনে ৬৬ শতাংশ ও জাপোরিঝঝিয়ায় ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে মঙ্গলবার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার ভোট গণনা করা হতে পারে। সন্ধ্যায় রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডুমায় গণভোটের ফল প্রকাশ করা হতে পারে।

এদিকে ক্রেমলিনপন্থী রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরআইএ জানিয়েছে, গণভোটের আংশিক ফলে দেখা গেছে, ওই চার অঞ্চলের ৯৬ শতাংশ বাসিন্দা রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

ভোট কেমন হচ্ছে, তা নিয়ে জাপোরিঝঝিয়ার এনারহোদার শহরের এক বাসিন্দার সঙ্গে মঙ্গলবার কথা বলে বিবিসি। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি। ওই ব্যক্তি বলেন, দুজন সশস্ত্র সেনার সঙ্গে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, আর মানুষকে ভোট দেওয়ার জন্য জোরজবরদস্তি করছেন। কেউ ভোট দিতে না চাইলে একটি চিহ্ন দেওয়া হচ্ছে। পরে তাঁরা আবার ওই ঠিকানায় ফিরে আসছেন। বিষয়টা খুবই ভয়ের।

গত বুধবার আংশিক সেনা নিযুক্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন পুতিন। এর ধারাবাহিকতায় যুদ্ধের জন্য রাশিয়া প্রায় তিন লাখ নতুন সেনাকে অন্তর্ভুক্ত করবে। রুশ প্রেসিডেন্টের ওই ঘোষণার পর রাশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ-ধরপাকড় চলছে। অনেকেই যুদ্ধে যোগ না দিতে রাশিয়া ছেড়ে যাচ্ছেন জর্জিয়া, মঙ্গোলিয়াসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে।

ভোটে অংশ না নিলে তাঁদের চাকরি হারানোর ভয় দেখানো হচ্ছে বলে জানান ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘ভোট এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। “না ভোট” দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁরা ব্যালট পেপার দেবে, আর আপনাকে “হ্যাঁ ভোট” দিতে হবে। না হলে আপনি চাকরি হারাবেন। এটাই হচ্ছে আসল কথা।’

এদিকে ইউক্রেনে গণভোটের সময় রাশিয়ার জাতীয় সংগীত বাজাতে দেখা গেছে। যেমনটা দোনেৎস্কে দেখেছেন বিবিসির পূর্ব ইউরোপবিষয়ক সংবাদদাতা সারাহ রেইন্সফোর্ড। ওই অঞ্চলে ভোট শুরুর আগে রুশ জাতীয় সংগীত বাজানোর সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন সারাহ রেইন্সফোর্ড।

সংযুক্তির ঘোষণা আসতে পারে শুক্রবার

আগামী শুক্রবার রুশ পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন পুতিন। ওই ভাষণে গণভোট হওয়া অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় বলছে, ‘রাশিয়ার নেতারা ধরেই নিয়েছেন, ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করার ঘোষণা তাদের “বিশেষ সামরিক অভিযান” ঘিরে রুশ জনগণের মধ্যে যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, তা দূর করবে এবং যুদ্ধের পক্ষে জনসমর্থন বাড়বে। তবে যুদ্ধে পিছু হঠার পর রাশিয়ার মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা দেখা গেছে, আর “আংশিক সেনা নিযুক্তি”র ঘোষাণায় দেশটিতে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে, তাতে মনে হয় না রুশ নেতাদের এই আশা পূরণ হবে।’

সীমান্তে রুশ নাগরিকদের ভিড়

গত বুধবার আংশিক সেনা নিযুক্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন পুতিন। এর ধারাবাহিকতায় যুদ্ধের জন্য রাশিয়া প্রায় ৩ লাখ নতুন সেনাকে অন্তর্ভুক্ত করবে। রুশ প্রেসিডেন্টের ওই ঘোষণার পর রাশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ–ধরপাকড় চলছে। অনেকেই যুদ্ধে যোগ না দিতে রাশিয়া ছেড়ে যাচ্ছেন জর্জিয়া, মঙ্গোলিয়াসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোর দেওয়া হিসাব বলছে, জর্জিয়ায় পাড়ি দিতে গত রোববার একপর্যায়ে সীমান্তে ৩ হাজার রুশ গাড়ির সারি দেখা যায়। অনেককে দেশটিতে প্রবেশ করতে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।

স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা এ–সংক্রান্ত কিছু ছবি এসেছে বিবিসির হাতে। সেখানেও জর্জিয়া ও মঙ্গোলিয়া সীমান্তে রুশ নাগরিকদের গাড়ির সারি দেখা গেছে। তবে এই দেশত্যাগ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।  

এরই মধ্যে আবার ঘুরেফিরে পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়টি সামনে এনেছে রাশিয়া। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, দরকার পড়লে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অধিকার তাদের রয়েছে। আর এটা ‘নিশ্চিতভাকে কোনো ধাপ্পাবাজি নয়’। বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে মেদভেদেভ বলেন, তাঁর বিশ্বাস, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো এই যুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না।