ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীরা টিকতে না পারলেও কীভাবে সরকারি দায়িত্বে টিকে আছে বিড়াল ‘ল্যারি ক্যাট’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ও কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ২০১১ সাল থেকে ৫ জন প্রধানমন্ত্রী এলেন-গেলেন। বর্তমানে ষষ্ঠজন দায়িত্ব পালন করছেন। তবে একের পর এক প্রধানমন্ত্রী যাওয়া-আসা করলেও একটি বিড়াল ১৪ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ এ কার্যালয়ে স্বপদে থেকে গেছে।
ল্যারি দ্য ক্যাট নামে পরিচিত এ বিড়ালের পদের নাম ‘চিফ মাউজার টু দ্য ক্যাবিনেট অফিস’। এটি একটি সরকারি পদ। ইঁদুর ধরা বা তাড়া করা এটির প্রধান কাজ।
কে এই ল্যারি
ফার্স্ট পোস্টের তথ্য বলছে, ২০০৭ সালে রাস্তায় জন্মেছিল ল্যারি। এরপর ‘ব্যাটারসি ডগস অ্যান্ড ক্যাটস হোম’-এ এটির আশ্রয় হয়েছিল। ২০১১ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মেয়াদকালে লন্ডনের আশ্রয়কেন্দ্রটি থেকে একে ডাউনিং স্ট্রিটে আনা হয়। শুরুতে পারিবারিক পোষা প্রাণী হিসেবে আনা হলেও সেখানে সে দ্রুত সরকারি দায়িত্ব পায়।
যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অতিথিদের স্বাগত জানানো, নিরাপত্তা যাচাই ও পুরোনো আসবাবে ঘুমানো আরামদায়ক হবে কি না, পরীক্ষা করার মতো কাজগুলো করে থাকে ল্যারি।
২০০৭ সালে রাস্তায় জন্মেছিল ল্যারি। এরপর ‘ব্যাটারসি ডগস অ্যান্ড ক্যাটস হোম’-এ তার আশ্রয় হয়েছিল। ২০১১ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মেয়াদকালে লন্ডনের ‘ব্যাটারসি ডগস অ্যান্ড ক্যাটস হোম’ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে এটিকে ডাউনিং স্ট্রিটে আনা হয়। শুরুতে পারিবারিক পোষা প্রাণী হিসেবে আনা হলেও সেখানে সে দ্রুত সরকারি দায়িত্ব পায়।
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিদায়ের আগে পার্লামেন্টে দেওয়া শেষ বক্তব্যে ক্যামেরন বলেছিলেন, ল্যারি ব্যক্তিগত পোষা প্রাণী নয়; বরং সরকারি চাকরিজীবী। আর সে কারণে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যিনিই দায়িত্ব নেন না কেন, ল্যারি ডাউনিং স্ট্রিটে থাকবে। ফার্স্ট পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ল্যারির অনানুষ্ঠানিক টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২২ সালে দেওয়া একটি পোস্টে বলা হয়েছিল, ‘আমি এখানে স্থায়ীভাবে থাকি, রাজনীতিকেরা অস্থায়ী বাসিন্দা।’
ক্ষমতার নীরব প্রত্যক্ষদর্শী
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ল্যারির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সে ছয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অধীন কাজ করেছে। তাঁরা হলেন ডেভিড ক্যামেরন, থেরেসা মে, বরিস জনসন, লিজ ট্রাস (মেয়াদ ছিল মাত্র ৪৫ দিন), ঋষি সুনাক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। কিয়ার ২০২৪ সালের মে মাসে দায়িত্ব নিয়েছেন। ল্যারি যাঁদের অধীন কাজ করেছে, তাঁদের মধ্যে স্টারমারই একমাত্র লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী। ল্যারির আগের সব ‘বস’ই ছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির।
দায়িত্ব পালনকালে বিদেশি অতিথিদের স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে ল্যারিকে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করতে দেখা গেছে। বলা হয়ে থাকে, সে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি সদয় ছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সে খুব একটা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাতে পারেনি। ২০১৯ সালে ট্রাম্প যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে থেরেসা মের সঙ্গে বৈঠক করার সময় ল্যারি তাঁর (ট্রাম্পের) সুরক্ষিত ক্যাডিলাক গাড়ির নিচে ঢুকে পড়েছিল। এমন অবস্থায় বৈঠক শেষ হওয়ার পরও ট্রাম্পের রওনা করতে কিছু সময় দেরি হয়ে যায়।
কর্মদক্ষতা ও জনপ্রিয়তা
ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে ল্যারির পারদর্শিতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এটির দায়িত্বের শুরুর দিকে ডেইলি টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘ল্যারির শিকারি মনোভাব বড্ড কম।’ তবে নিজের গণ্ডির সুরক্ষায় ল্যারির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। বিশেষ করে পররাষ্ট্র দপ্তরের বিড়ালের সঙ্গে তার তুমুল দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে সেটা প্রকাশ পায়।
ল্যারি গণমাধ্যমের মনোযোগ কাড়তেও বেশ পারদর্শী। স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘টিভি ক্যামেরা কোথায় ও কীভাবে ঠিক জায়গায় দাঁড়াতে হয়, তা সে জানে।’ বিশেষ করে বড় কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে থাকলে সে এমন জায়গায় গিয়ে অবস্থান নেয়, যেখান থেকে তাকে ঠিকঠাকমতো দেখা যায়। মাঝেমধ্যে আচমকা ক্যামেরায় ঢুকে পড়া কিংবা দুষ্টুমিতে মেতে ওঠার কারণে ল্যারি ব্রিটিশদের মধ্যে বেশ প্রিয়।
দায়িত্ব পালনকালে বিদেশি অতিথিদের স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে ল্যারিকে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করতে দেখা গেছে। বলা হয়ে থাকে, সে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি সদয় ছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সে খুব একটা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাতে পারেনি।
ল্যারির জনপ্রিয়তা ডাউনিং স্ট্রিটের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিনোদনবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘টেলিস্পটিং’ এক প্রতিবেদনে ল্যারির একটি অনানুষ্ঠানিক অ্যাকাউন্ট থেকে ভাইরাল হওয়া এক টুইটের কথা উল্লেখ করেছিল। সেই পোস্টে বলা হয়েছিল, ‘রাজা আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে বলেছেন, কারণ যথেষ্ট দীর্ঘ সময় ধরে এসব কাণ্ডকারখানা চলছে।’
এরপরই “#ল্যারিফরলিডার” প্রচারণা শুরু হয়। এ প্রচারণার অন্যতম দাবি ছিল, আমরা একটি ‘দায়িত্বশীল হিস-কাল (ফিসক্যাল বা রাজস্ব নীতিমালার বিপরীত) নীতিমালা’ চাই।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে চরম অস্থিরতা দেখা গেছে। কিন্তু এই অনিশ্চয়তার মধ্যেও ব্রিটিশ সরকারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ল্যারি অবিচ্ছেদ্যভাবে থেকেছে। রাজনীতিবিদরা আসেন আর যান, অথচ ল্যারি স্বপদে বহাল থাকে। তার এ উপস্থিতি মনে করিয়ে দেয়, নির্বাচনের ফলাফল যা–ই হোক, কিছু প্রতিষ্ঠান অবিচল থাকে।