ইউক্রেনের শীর্ষস্থানীয় দুই কর্মকর্তাকে কেন সরিয়ে দিলেন জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত রোববার দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউয়ের প্রধান ইভান বাকানভ ও প্রসিকিউটর জেনারেল ইরিনা ভেনেদিকতোভাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের অধীনে কাজ করা একাধিক কর্মকর্তা নানা সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশ করেছে।

কারা এই দুই কর্মকর্তা, কেনই বা তাঁদের বরখাস্ত করা হলো, আর এ ঘটনা ঘিরে ভবিষ্যতে কী হতে যাচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে।

কারা এই দুই কর্মকর্তা

৪৭ বছর বয়সী ইভান বাকানভের সঙ্গে জেলেনস্কির সম্পর্ক বহু পুরোনো। একাধারে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের শৈশবের বন্ধু এবং ব্যবসার সাবেক অংশীদার। একজন টেলিভিশন অভিনেতা হিসেবে কাজ করার সময় জেলেনস্কির মিডিয়া ব্যবসা সামলাতে পাশে ছিলেন বাকানভ। এমনকি তাঁর প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠার পেছনে প্রচার-প্রচারণার মূল দায়িত্বে ছিলেন এই বাল্যবন্ধু। বাকানভকে ২০১৯ সালের আগস্টে এসবিইউয়ের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন জেলেনস্কি।

অপরদিকে ৪৩ বছর বয়সী ইরিনা ভেনেদিকতোভা ইউক্রেনের প্রথম নারী প্রসিকিউটর জেনারেল। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ জোগাড়ে তাঁর প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২০২০ সালে তাঁকে যখন নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন প্রসিকিউটর জেনারেলের অফিসের নানা অদক্ষতা ও দুর্নীতি সামাল দিতে সংস্কার আনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।

দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে জেলেনস্কির অভিযোগ

বরখাস্ত হওয়া দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে জেলেনস্কির অভিযোগ, তাঁদের অধীনে কাজ করা ৬০ জনের বেশি কর্মকর্তা রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলোতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয়, তদন্তকারী সংস্থা ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও রাশিয়াকে সহযোগিতা করার ঘটনায় ৬৫১টি মামলা করা হয়েছে।

রোববার জেলেনস্কি বলেন, রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে ঘিরে এসব অপরাধ–সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন সামনে এনেছে। এসব প্রশ্নের প্রতিটির যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের ইউরেশিয়া সেন্টারের গবেষক ডগ ক্লাইন। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এর জেরে গত ফেব্রুয়ারিতে যখন রাশিয়া অভিযান শুরু করল, তখন থেকেই ইউক্রেনের গোয়েন্দাপ্রধানের ওপর আস্থা হারিয়েছিলেন জেলেনস্কি।

এই গবেষক বলেন, ‘ক্রিমিয়ায় এসবিইউয়ের সাবেক প্রধানকে দেশদ্রোহ ও রাশিয়ার কাছে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের যাঁরা রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, তাঁদের একজন তিনি।’

আরও পড়ুন

অপরদিকে ভেনেদিকতোভার ওপর প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয়ে সংস্কার আনার যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল. তা পালন করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন হলে মনে করেন ডগ ক্লাইন। তাঁর ভাষ্য, ভেনেদিকতোভা অধীনের থাকা কর্মকর্তাদের অনেকে তদন্ত পরিচালনা করতে গিয়ে ঘুষ নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বাধা দেননি।

জেলেনস্কির এই পদক্ষেপ কতটা ব্যতিক্রম

ইউক্রেনের রাজধানী থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক অ্যালান ফিসার বলছেন, প্রশাসনে এ ধরনের পরিবর্তন আনাটা জেলেনস্কির জন্য বেশ ব্যতিক্রম। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বড় একটি দল সব সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পাশে রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বরখাস্ত হওয়া দুজনও।

এখন কী হবে

ইভান বাকানভকে সরানোর পর এসবিইউয়ে নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার এই পদের জন্য ভাসিল মালিউকের নাম ঘোষণা করেছেন জেলেনস্কি। গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে বেশ অভিজ্ঞতা রয়েছে মালিউকের। দুর্নীতি দমনেও নামডাক আছে। আগের দিনই ভেনেদিকতোভার পদে নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক ডেপুটি প্রসিকিউটর জেনারেল ওলেকসি সিমোনেঙ্কোকে।

আরও পড়ুন

এদিকে বরখাস্ত হওয়া দুজনকে নিয়ে এখন তদন্ত চলছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদক অ্যালান ফিসার বলছেন, ওই দুজন সক্রিয়ভাবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কাজ করছিলেন কি না, তা এখনো জানা যায়নি। তবে এখানে প্রশ্নটা উঠবে তাঁদের ওপর থাকা দায়িত্ব, আর নিজ নিজ বিভাগের নেতৃত্বদানের ব্যর্থতা নিয়ে।

এখন সবকিছু নির্ভর করছে তদন্তে কী বেরিয়ে আসে, তার ওপর। যদি নেতিবাচক কিছু সামনে আসে তাহলে এই দুই কর্মকর্তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরি থেকে সরিয়ে দিতে পার্লামেন্টে প্রস্তাব আনতে পারেন জেলেনস্কি।

আরও পড়ুন