‘কনস্টান্টিনোপল’ যেভাবে ওসমানি সাম্রাজ্যের অধীনে এল

১৪৫৩ সালের ২৯ মে সুলতান মেহমেদের সৈন্যরা কনস্টান্টিনোপল আক্রমণ করে। ৪৭ দিন টানা গোলাবর্ষণের পর এই শহর তুর্কি ওসমানি সাম্রাজ্যের দখলে আসে। তবে ইউরোপীয়রা আজও ভুলতে পারেনি সেই পরাজয়ের গ্লানি। কনস্টান্টিনোপলের পতন নিয়ে লিখেছেন বিবিসি উর্দুর জাফর সৈয়দ। আজ সোমবার লেখাটি বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত বাইজেন্টাইন গির্জাকে মসজিদে রূপান্তর করেন তৎকালীন কনস্টান্টিনোপল বিজয়ী সুলতান মেহমেদ, যা এখন হায়া সোফিয়া নামে পরিচিতফাইল ছবি: রয়টার্স

১৪৫৩ সালের ২৯ মে  ঘড়িতে সময় রাত দেড়টা। পৃথিবীর এক অন্যতম প্রাচীন ও শ্রেষ্ঠ শহরের প্রাচীর আর গম্বুজগুলোর ওপর দিয়ে হলুদ চাঁদ পশ্চিমের দিকে হেলে পড়ছে, যেন বড় কোনো বিপদের সংকেত দিচ্ছে।

অস্তমিত চাঁদের ম্লান আলোয় আকাশের তারাগুলো দেখতে পাচ্ছে যে, শহরের প্রাচীরের বাইরে সেনারা ধীরে ধীরে এবং সুশৃঙ্খলভাবে জড়ো হচ্ছে।

ওই সৈন্যরা তাদের হৃদয় দিয়ে যেন অনুভব করছিল, তারা ইতিহাসের মোড় ঘোরানো এক মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

এই শহর হচ্ছে কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল) এবং প্রাচীরের বাইরে অটোমান বা ওসমানীয় সেনারা চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শহরের প্রাচীর লক্ষ্য করে ওসমানীয় কামান ৪৭ দিন ধরে গোলাবর্ষণ করে। সেনাপতিরা বিশেষভাবে তিনটি স্থান লক্ষ্য করে তাদের গোলাবর্ষণ চালিয়ে যায়, যাতে প্রাচীর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২১ বছর বয়সী ওসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ হঠাৎ করেই তাঁর বাহিনীর সামনে সারিতে পৌঁছে যান। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, চূড়ান্ত হামলা হবে ‘মেসুত টিকিওন’ নামক প্রাচীরের মাঝামাঝি অংশে, যেখানে অন্তত নয়টি ফাটল সৃষ্টি হয়েছে এবং পরিখার একটি বড় অংশে ফাটল ধরেছে।

মাথায় মোটা পাগড়ি আর সোনালি পোশাক পরে সুলতান তুর্কি ভাষায় তাঁর সৈন্যদের বললেন, ‘আমার বন্ধু ও ছেলেরা, এগিয়ে চলো, নিজেদের প্রমাণ করার সময় এসে গেছে।’

সঙ্গে সঙ্গেই বাঁশি, শিঙা, ঢোল ও বিউগলের শব্দ রাতের নীরবতা ভেদ করে দেয়। কিন্তু এই কানফাটা শব্দেও ওসমানীয় সেনাদের আকাশ ফাটানো চিৎকার পরিষ্কার শোনা যাচ্ছিল। এরপর তারা প্রাচীরের দুর্বল অংশে হামলা চালায়।

এক পাশে স্থলভাগ থেকে আর অন্য পাশে সমুদ্রে যুদ্ধজাহাজে লাগানো কামানের মুখ থেকে গোলা ছুড়তে শুরু করে সেনারা।

বাইজেন্টাইন সৈন্যরা প্রাচীর রক্ষা করতে প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু দেড় মাস ধরে চলা অবরোধে তাদের মনোবল ভেঙে যায়। তারা হতাশ ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

অনেক সাধারণ মানুষও সেনাদের সাহায্য করতে প্রাচীরের কাছে এসে আক্রমণকারীদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে হায়া সোফিয়া মসজিদের ভেতরের অংশ। প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক হায়া সোফিয়া দেখতে আসেন
ফাইল ছবি: রয়টার্স।

অন্যরা কাছের একটি গির্জায় ছুটে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে প্রার্থনা করতে শুরু করে। পাদরিরা গির্জার ঘণ্টা জোরে বাজাতে শুরু করেন, যারা ঘুমন্ত ছিল, ঢং ঢং শব্দে তারাও জেগে ওঠে।

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সব মানুষ নিজেদের ধর্মীয় বিভেদ ভুলে, একত্র হয়ে শহরের সবচেয়ে বড় ও পবিত্র গির্জা হায়া সোফিয়ায় জড়ো হতে থাকে।

ওসমানীয় বাহিনীর অগ্রযাত্রা থামাতে প্রতিরক্ষা বাহিনী সাহসিকতার সঙ্গে প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছিল।

সেদিন ওই শহরে থাকা ইতালীয় চিকিৎসক নিকোলো বারবেরো লিখেছেন, সাদা পাগড়ি পরা বাহিনীর সদস্যরা নির্ভীক সিংহের মতো আক্রমণ চালাচ্ছিল। আর তাদের স্লোগান ও ঢোলের শব্দ এমন ছিল, যেন তারা এই পৃথিবীর না।

ভোরের দিকে তুর্কি সেনারা প্রাচীরের চূড়ায় পৌঁছে যায়। ততক্ষণে অধিকাংশ প্রতিরক্ষা সেনা মারা গেছে এবং তাদের সেনাপতি জিওভান্নি জাস্টিনিয়ানি গুরুতর আহত হন। তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

পূর্ব দিক থেকে সূর্যের প্রথম আলোতে দেখা গেল, একজন তুর্কি সেনা কিরকোপোটা ফটকের ওপরে থাকা বাইজেন্টাইন পতাকা নামিয়ে ওসমানীয় পতাকা উড়িয়ে দিচ্ছে।

সুলতান মেহমেদ তাঁর মন্ত্রী ও সহযোগীদের সঙ্গে একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে হায়া সোফিয়ায় যান।

প্রধান ফটকের সামনে এসে ঘোড়া থেকে নেমে সড়ক থেকে এক মুঠো ধুলা তুলে তাঁর পাগড়িতে ছিটিয়ে দেন। আর তা দেখে তাঁর সহচরদের চোখ ভিজে ওঠে।

ওসমানি শাসনামলে ইস্তাম্বুলে গড়ে ওঠা সুলেমানিয়া মসজিদ
ফাইল ছবি–রয়টার্স

মুসলিমরা ৭০০ বছরের প্রচেষ্টার পর অবশেষে কনস্টান্টিনোপল জয় করেছে। এই জয় শুধু একটি শহরের দখল বা এক রাজা থেকে আরেক রাজার ক্ষমতাবদল ছিল না, এর সঙ্গে সঙ্গে এক ঐতিহাসিক যুগের পতন ও আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল।

একদিকে খ্রিষ্টপূর্ব ২৭ অব্দে শুরু হওয়া রোমান সাম্রাজ্য ১৪৮০ বছর ধরে কোনো না কোনো রূপে টিকে থাকার পর অবশেষে পতন ঘটে।

অন্যদিকে ওসমানীয় সাম্রাজ্য তার শীর্ষে পৌঁছায় এবং পরবর্তী ৪০০ বছর ধরে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বহু অংশে রাজত্ব করে।

১৪৫৩ সালকেই মধ্যযুগের সমাপ্তি ও আধুনিক যুগের সূচনা বলে মনে করা হয়। শুধু তা–ই নয়, কনস্টান্টিনোপল বিজয়কে সামরিক ইতিহাসের একটি মাইলফলক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

কারণ পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয় যে বারুদ ও বড় বড় কামানের গোলার যুগে শহরকে শুধু প্রাচীর দিয়ে রক্ষা করা যাবে না।

তুর্কিরা শহরটি দখল করার পর হাজার হাজার গ্রিকভাষী নাগরিক এখান থেকে পালিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে ইতালিতে বসতি স্থাপন করে।

সে সময় ইউরোপ ‘অন্ধকার যুগ’-এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল এবং প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে কনস্টান্টিনোপলে তখনও গ্রিক ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা হতো।

এখানে আগত শরণার্থীদের কাছে হীরা এবং রত্নপাথরের চেয়ে মূল্যবান সম্পদ ছিল অ্যারিস্টটল, প্লেটো, টলেমি, গ্যালেন ও অন্য দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও পণ্ডিতদের মূল গ্রিক পাণ্ডুলিপি।

ইউরোপে প্রাচীন গ্রিক বিজ্ঞানের পুনরুজ্জীবনে তাঁদের সবারই বিরাট ভূমিকা ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, এ কারণেই ইউরোপে রেনেসাঁ বা নবজাগরণের সূচনা হয়; যা পরবর্তী কয়েক শ বছর ইউরোপকে গোটা পৃথিবীর থেকে এগিয়ে দেয়, যে ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।

তরুণ সুলতান মেহমেদ ২৯ মে সকালে যে শহরটি দেখেছিলেন, সেটি তখন আর সেই শহর ছিল না। যার জাঁকজমকের কাহিনি তিনি ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছেন।

দীর্ঘ অবক্ষয়ের পর বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য অবলুপ্ত হয়ে পড়ে এবং শত শত বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর ধনবান শহর কনস্টান্টিনোপলেও জনসংখ্যা কমতে কমতে কয়েক হাজারে নেমে আসে।

শহরের অনেকাংশ জনশূন্য হয়ে একে অপর থেকে আলাদা হয়ে বিচ্ছিন্ন গ্রামে পরিণত হয়। বলা হয়ে থাকে, তরুণ সুলতান শহরের এই করুণ অবস্থা দেখে পারস্যের কবি শেখ সাদির লেখা এই কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন—

ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় বাজার গ্র্যান্ডবাজার গড়ে তোলেন সুলতান মেহমেদ
ফাইল ছবি–রয়টার্স

‘উলু ডাকে আফরাসিয়াবের মিনারে...মাকড়সা জাল বোনে রোমান সম্রাটের প্রাসাদে।’
কনস্টান্টিনোপলের পুরোনো নাম ছিল বাইজেন্টিয়াম। কিন্তু যখন ৩৩০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টাইন প্রথম তাঁর রাজধানী রোম থেকে এখানে স্থানান্তর করেন, তখন শহরের নাম বদলে তাঁর নামানুসারে ‘কনস্টান্টিনোপল’ রাখা হয়। আরবরা যাকে ‘কুসতন্তিনিয়া’ বলত।

পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য পতনের পরও এই পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য কনস্টান্টিনোপলে টিকে থাকে এবং চতুর্থ থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত এই শহর এতটা উন্নতি করে যে তখন দুনিয়ার আর কোনো শহর তার ধারে–কাছে ছিল না।

এ কারণেই মুসলিমরা শুরু থেকেই শহরটি জয় করার স্বপ্ন দেখে আসছিল।

এই লক্ষ্য পূরণে প্রথমদিককার কয়েকটি চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ৬৭৪ সালে একটি বিশাল শক্তিশালী নৌবহর প্রস্তুত করে আরবরা কনস্টান্টিনোপলের দিকে রওনা দেয়।

এই বহর শহরের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে ক্যাম্প করে এবং পরবর্তী চার বছর ধরে বারবার প্রাচীর ভেদ করে শহরে ঢোকার চেষ্টা করে।

অবশেষে ৬৭৮ সালের শেষ দিকে বাইজেন্টাইনদের নৌবাহিনী শহর থেকে বেরিয়ে এসে আরবদের ওপর আক্রমণ চালায়। এবার তাদের হাতে ছিল এক ভয়ানক অস্ত্র, যার নাম ছিল ‘আতিশে ইউনানি’, বাংলায় যার অর্থ, ‘গ্রিক আগুন’।

এই গ্রিক আগুন আসলে কী ছিল, তা আজও জানা যায়নি। তবে এটি ছিল এমন এক দাহ্য পদার্থ, যা তীরের সাহায্যে ছুড়ে দেওয়া হতো এবং এটি যুদ্ধ নৌযানের গায়ে আটক থাকত।

আরও আশ্চর্যের বিষয়, পানি ঢাললে এই আগুন আরও জ্বলে উঠত।

আরবরা এই ভয়ানক অস্ত্রের জন্য প্রস্তুত ছিল না। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো নৌবহর আগুনের সমুদ্রে পরিণত হয়।

সেনারা পানিতে লাফিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করলেও তাতেও রক্ষা হয়নি। কারণ, এই গ্রিক আগুন পানির ওপরে পড়েও জ্বলতে থাকত। মনে হচ্ছিল, পুরো মরমর সাগরে আগুন ধরে গেছে।

আরবদের পিছুহটা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। ফেরার পথে একটি ভয়াবহ সমুদ্রঝড় আরও সর্বনাশ ডেকে আনে এবং শত শত জাহাজের মধ্যে মাত্র অর্ধেক নৌযান ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিল।

এই অবরোধ চলাকালেই প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) মারা যান। তাঁর কবর আজও শহরের প্রাচীরের বাইরে রয়েছে।

সুলতান মেহমেদ এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যাকে তুর্কিরা পবিত্র স্থান বলে মানে।

এরপর ৭১৭ সালে উমাইয়াদের আমির সুলাইমান ইবনে আবদুল মালিক আরও ভালো প্রস্তুতি নিয়ে আবার কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করেন। এবারও পরিণতি ভালো হয়নি। প্রায় দুই হাজার নৌযুদ্ধযানের মধ্যে মাত্র পাঁচটি ফিরে আসতে সক্ষম হয়।

সম্ভবত এই কারণেই পরবর্তী ৬০০ বছর ধরে মুসলিমরা আর কনস্টান্টিনোপলে আক্রমণ করেনি। এরপর সুলতান মেহমেদ অবশেষে শহরের ওপর নিজের পতাকা উড়িয়ে পুরোনো সব বদলা পূর্ণ করেন।

শহর দখলের পর সুলতান তাঁর রাজধানী এডিরনে থেকে কনস্টান্টিনোপলে স্থানান্তর করেন এবং নিজের জন্য রোমের সম্রাটের উপাধি ‘কায়সার-ই-রোম’ গ্রহণ করেন।

পরবর্তী দশকে এই শহর আবার এমন উত্থান দেখে, যা অতীতের গৌরবের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। সুলতান নিজের সাম্রাজ্যজুড়ে এক ফরমান পাঠালেন, ‘কেউ আসতে চাইলে এই শহরে আসতে পারেন, তাঁকে শহরে ঘর ও বাগান দেওয়া হবে।’

শুধু এটুকুই নয়, সুলতান মেহমেদ ইউরোপ থেকেও লোকজনকে কনস্টান্টিনোপলে আসার আমন্ত্রণ জানান, যাতে শহরটি আবার জনবসতিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

এ ছাড়া সুলতান শহরের ধ্বংসপ্রাপ্ত মৌলিক অবকাঠামো নতুন করে নির্মাণ করেন, পুরোনো খালগুলো মেরামত করেন এবং নিষ্কাশনের ব্যবস্থা চালু করেন।

সুলতান মেহমেদ বড় পরিসরে নতুন নির্মাণকাজ শুরু করেন, যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো তোপকাপি প্রাসাদ এবং গ্র্যান্ড বাজার।

অল্প সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন রকম হস্তশিল্পী, কারিগর, ব্যবসায়ী, ক্যালিগ্রাফার, চিত্রশিল্পী, স্বর্ণকার এবং অন্যান্য দক্ষ পেশাজীবী শহরের দিকে আসতে শুরু করেন।

সুলতান মেহমেদ হায়া সোফিয়া নামের গির্জাটি মসজিদে রূপান্তর করেন। তবে তিনি শহরের দ্বিতীয় বড় গির্জা‘ক্লিসায়ে হাওয়ারিয়ান’ বা চার্চ অব দ্য অ্যাপোস্টলসকে গ্রিক অর্থোডক্স সম্প্রদায়ের কাছেই রেখে দেন। এই সম্প্রদায় আজও একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে।

সুলতান মেহমেদের সময় গড়ে ওঠে তোপকাপি প্রাসাদ, যা এখন জাদুঘর
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সুলতান মেহমেদের ছেলে সেলিমের শাসনামলে ওসমানি সাম্রাজ্য খিলাফতের মর্যাদা লাভ করে এবং কনস্টান্টিনোপল হয় এর রাজধানী। সব সুন্নি মুসলিমের কেন্দ্রীয় শহরে পরিণত হয়।

সুলতান মেহমেদের নাতি সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্টের শাসনামলে কনস্টান্টিনোপল নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায়। এই সেই সুলেমান, যাঁকে বিখ্যাত তুর্কি ধারাবাহিক ‘মাই সুলতান’-এ দেখানো হয়েছে।

সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্টের রানি হুররাম সুলতান বিখ্যাত স্থপতি সিনানকে ভাড়া করেছিলেন, যিনি রানির জন্য একটি বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন।

সিনানের অন্যান্য বিখ্যাত স্থাপনার মধ্যে রয়েছে সুলেমানিয়া মসজিদ, হুররাম সুলতান হামাম, খোসরু পাশা মসজিদ, শাহজাদা মসজিদ ও অন্যান্য স্থাপনা।

কনস্টান্টিনোপলের পতন ইউরোপের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বই, কবিতা লেখা হয়, অনেক চিত্রকর্ম আঁকা হয় এবং এই ঘটনা ইউরোপীয়দের সামষ্টিক চেতনার অংশ হয়ে ওঠে।

এ কারণেই ইউরোপ কখনো কনস্টান্টিনোপলকে ভুলতে পারেনি।

ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তুরস্ককে সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়ে আজও গড়িমসি করছে। এর কারণ, শত বছরের পুরোনো সেই ইতিহাস।

গ্রিসে আজও বৃহস্পতিবারকে অশুভ দিন হিসেবে ধরা হয়। কারণ, ১৪৫৩ সালের ২৯ মে ছিল বৃহস্পতিবার।