একে একে সাত শিশুকে খুন করেছেন হাসপাতালের নার্স

লুসি লেটবি
ফাইল ছবি: এএফপি

লুসি লেটবি, পেশায় নার্স (সেবিকা)। হাসপাতালে অসুস্থ শিশুদের সেবা করা, সুস্থ করে তোলা তাঁর কাজ। কিন্তু লুসি করেছেন উল্টোটা। খুন করেছেন শিশুদের। তাও একটি কিংবা দুটি নয়, একে একে সাত শিশুকে খুন করেছেন লুসি। আরও ছয় শিশুকে খুনের চেষ্টা করেছেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্যের আদালতে এসব অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন লুসি। দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘ সময় ধরে চলা বিচারের ঘটনাগুলোর একটি এটা।

লুসির বাড়ি পশ্চিম ইংল্যান্ডের হেয়ারফোর্ডে। ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার থেকে নার্সিংয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ২০১১ সালে স্নাতক শেষ করেন। এরপর কাউন্টেস অব চেস্টার হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটে কাজে যোগ দেন। ২০১৫ সালে তিনি শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে কাজের যোগ্যতা অর্জন করেন।

বিচারকালে ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টে লুসি বলেছেন, ‘আমি বরাবরই শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাইতাম।’ ব্যক্তিজীবনে তিনি খুবই সক্রিয় একজন মানুষ। নিয়মিত নাচের ক্লাসে ও ব্যায়ামাগারে যান। ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন।

লুসির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

লুসির বিরুদ্ধে ১৭টি শিশুর ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু নবজাতক ছিল। মাত্র কয়েক দিন বয়স ছিল তাদের। ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ ঘটনায় লুসি ভুক্তভোগী শিশুদের শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে বাতাস ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া প্রসিকিউটররা লুসির বিরুদ্ধে ইনসুলিন প্রয়োগ ও অতিরিক্ত দুধ খাওয়ানোর অভিযোগ এনেছেন।

তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে সাত শিশুকে হত্যা ও আরও ছয় শিশুকে হত্যাচেষ্টায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন লুসি। তবে অপর দুই শিশুকে হত্যা ও দুটিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ভুক্তভোগী শিশুদের মধ্যে এক দম্পতির যমজ দুই ছেলে–মেয়ে এবং যমজ তিন ছেলেশিশু রয়েছে দুই দম্পতির। এসব শিশুর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

যেভাবে সন্দেহ দানা বাঁধে

আদালতে প্রসিকিউটর নিক জনসন জানান, ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন সময়ে কাউন্টেস অব চেস্টার হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটে শিশুমৃত্যুর ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দেয়। সন্দেহ হওয়ায় ওই সময় লুসিকে নবজাতক ইউনিট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তদন্ত চলে এসব ঘটনা নিয়ে।

শুনানিতে লুসি বলেন, ‘রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং থেকে পাঠানো এক চিঠিতে আমাকে অভিযোগের বিষয়ে জানানো হয়। এটা খুবই হতাশাজনক ছিল।’ এটা জানার পর নিজের ক্ষতি করার চিন্তা করেছিলেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন লুসি।

গ্রেপ্তার ও তল্লাশি

এর আগে লুসি দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দুবারই জামিনে মুক্তি পান তিনি। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে লুসি প্রথমবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০২০ সালে তৃতীয় দফায় গ্রেপ্তার হন লুসি। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়।

লুসির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি পুরোনো নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই নোটে লুসি লিখেছিলেন, ‘আমার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। আমি ওদের খুন করেছি। কারণ, আমি ঠিকমতো ওদের দেখাশোনা করতে পারিনি।’

পরে লুসি আদালতে স্বীকার করেন, যখন তাঁকে নবজাতক ইউনিট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি ওই নোট লিখেছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি ভয়ংকর ভুল করে ফেলেছেন।

দোষ অস্বীকার

লুসির আইনজীবী বেন মেয়ার্স বলেন, এসব ঘটনার জন্য লুসিকে এককভাবে দায়ী করা যায় না। ভুল করে বা ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় নবজাতক ইউনিটে লোকবলের অভাব ছিল। জন্মের সময় শিশুদের স্বাস্থ্য ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল।
লুসিকে নিবেদিতপ্রাণ নার্স দাবি করে আইনজীবী বেন মেয়ার্স বলেন, লুসির বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের কোনো প্রত্যক্ষ তথ্য–প্রমাণ নেই।

শিশুদের আঘাত করা, হত্যার দায় বারবার অস্বীকার করেছেন লুসি। তাঁর দাবি, হাসপাতালে চার পরামর্শকের একটি ‘গ্যাং’ রয়েছে। তারা হাসপাতালের ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ঢাকতে’ তাঁর ওপর দোষ চাপানোর ষড়যন্ত্র করেছেন।