স্বেচ্ছাসেবী অসুস্থ হয়ে পড়ায় অক্সফোর্ডের টিকার পরীক্ষা স্থগিত

করোনার টিকা নিয়ে গবেষণা করছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যে করোনা প্রতিরোধে টিকা নিয়ে তৃতীয় বা চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষা চালাচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারক অ্যাস্ট্রাজেনেকা। হঠাৎ করেই একজন টিকাগ্রহীতা স্বেচ্ছাসেবী মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এতে করোনার টিকার পরীক্ষা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

অবশ্য টিকা পরীক্ষা বন্ধ করা নিয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে এটা নিয়মিত পরীক্ষার অংশ। তবে অপ্রত্যাশিত ওই অসুস্থতা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

অক্সফোর্ডের করোনার টিকাটির ফলাফল বিশ্বজুড়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে টিকা নিয়ে যত পরীক্ষা চলছে, এর মধ্যে অক্সফোর্ডের টিকাকে অগ্রগামী ও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের সফল পরীক্ষার পর এটি প্রথম টিকা হিসেবে বাজারে আসতে পারে বলে অনেকেই উচ্চাশা প্রকাশ করেন।

টিকাটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা যুক্তরাজ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় চালানো হচ্ছে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় হাজারো অংশগ্রহণকারীর শরীরে টিকা প্রয়োগ করে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হয়। টিকা পরীক্ষার ফল পেতে কখনো কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অক্সফোর্ডের টিকার একটি আন্তর্জাতিক পরীক্ষা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। এ পরীক্ষার স্বতন্ত্র তদন্ত পর্যালোচনা করে তারপর নিয়ন্ত্রকেরা এ পরীক্ষা চালানো হবে কি না, এর অনুমতি দেবেন।

অক্সফোর্ডের একজন মুখপাত্র বলেন, বড় ধরনের পরীক্ষায় মাঝেমধ্যে অসুস্থতার ঘটনা ঘটে। তবে সতর্কতার সঙ্গে এর পর্যালোচনা করতে হবে।

এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অক্সফোর্ডের টিকার পরীক্ষা বন্ধ হলো। বড় ধরনের টিকা পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটি সাধারণ ঘটনা। কোনো স্বেচ্ছাসেবী হাসপাতালে ভর্তি হলে তখন সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই পরীক্ষা আবার শুরু হতে পারে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট স্ট্যাট নিউজ সবার আগে অক্সফোর্ডের টিকার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার খবর সামনে আনে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেনি তারা। সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, টিকাগ্রহীতা অসুস্থ হলেও সেরে ওঠার আশা করা যাচ্ছে।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, ৩ নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনের আগে তাঁর টিকা চাই। তাঁর এ মন্তব্য মানুষের মনে ভীতি ছড়িয়েছে যে করোনার টিকার নিরাপত্তার দিক না ভেবে রাজনৈতিক দিকটাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার নয়টি টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান একটি চুক্তিতে সই করেছে, যাতে টিকার তৃতীয় ধাপ শেষ না হলে কেউ অনুমোদনের জন্য আবেদন করবে না বলে উল্লেখ করা আছে। এতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ছাড়াও জনসন অ্যান্ড জনসন, বায়োএনটেক, গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন, ফাইজার, মের্ক, মডার্না, সানোফি ও নোভাভ্যাক্স রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ১৮০টির মতো টিকা তৈরিতে কাজ চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো টিকাই তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ করতে পারেনি। তারা মনে করছে, টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার দিক বিবেচনায় ধরলে এ বছরে কোনো টিকা অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

এদিকে, চীন ও রাশিয়া তাদের দেশে স্থানীয়ভাবে তৈরি টিকা গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের ওপর প্রয়োগ শুরু করেছে। এসব টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় পরীক্ষাধীন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) বলেছে, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেও যেকোনো টিকা অনুমোদন পেতে পারে। ১ নভেম্বর টিকা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন নামের সংস্থাটি অঙ্গরাজ্যগুলোকে প্রস্তুতি নিতেও বলেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগেই টিকা দেওয়ার বিষয়ে অনড় থাকলেও তাঁর প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক নেতা জো বাইডেন এ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার দাবি করেছেন।