হাঙ্গেরিতে দুই সাংবাদিক, এক ব্যবসায়ীর ফোনে আড়িপাতা হয়

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিকতর অরবান।
ছবি: রয়টার্স

হাঙ্গেরিতে কমিউনিস্ট শাসনামলে প্রতিবেশীদের ওপর নজরদারি করার জন্য লোকজন নিয়োগ করা হতো। সম্ভাব্য কোনো হুমকির তথ্য তারা গুপ্ত পুলিশকে জানিয়ে দিত। প্রধানমন্ত্রী ভিকতর অরবানের হাঙ্গেরিতে প্রায় একই কাজ হয়েছে। পার্থক্য শুধু নজরদারির কাজে লোক নিয়োগের পরিবর্তে স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। গতকাল রোববার দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, হাঙ্গেরির যে তিনজনের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে, তাঁদের দুজন সাংবাদিক, একজন ব্যবসায়ী। আর যে দুজনের ফোনে স্পাইওয়্যার ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে, তাঁদের একজন অ্যাকটিভিস্ট, অপরজন উদ্যোক্তা।

আরও পড়ুন

খবরে বলা হয়, সাংবাদিকসহ অন্য যাঁরা সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে বা সরকারের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে, তাঁদের নজরদারি করতে অরবানের সরকার স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছে।

ইসরায়েলি একটি স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়ি পাতার যে ঘটনা ফাঁস হয়েছে, তাতে হাঙ্গেরির নামও রয়েছে।

ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের তৈরি করা সফটওয়্যার ‘পেগাসাস’ ব্যবহার করে এই আড়ি পাতার ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, এমনকি কোনো দেশের ক্ষমতাসীন পরিবারের সদস্যদের ওপরও আড়ি পাতা হয়েছে। মূলত কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর সরকার আড়ি পাতার কাজে এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছে।

আরও পড়ুন

৫০ হাজারের বেশি ফোন নম্বরের একটি তালিকা ফাঁস হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে এনএসওর গ্রাহকেরা এসব নম্বরে আড়ি পেতেছে। এ তালিকায় হাঙ্গেরির তিন শতাধিক ফোন নম্বর পাওয়া গেছে। এই ফোন নম্বরগুলো সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, অ্যাকটিভিস্টসহ অন্যদের।

হাঙ্গেরির যেসব ফোন নম্বর পাওয়া গেছে, তার মধ্যে কতগুলোতে পেগাসাসের মাধ্যমে আড়ি পাতা হয়েছে বা আড়ি পাতার চেষ্টা হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে তালিকায় থাকা নম্বর ব্যবহার করা হতো, এমন ছয়টি মুঠোফোনের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনটি ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে নজরদারি চালানো হয়েছে। দুটি ফোনে স্পাইওয়্যার ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অপর ফোনটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।

পেগাসাস হলো একটি ম্যালওয়্যার (বিশেষ ধরনের ভাইরাস)। এর মাধ্যমে আইফোন ও অ্যানড্রয়েড ফোনের সব মেসেজ, ছবি, ই-মেইল, কল রেকর্ড বের করা যায়। এই ম্যালওয়্যার ফোন ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতেই মাইক্রোফোন চালু করে দেয়।

ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তালিকায় যে ৫০ হাজার ফোন নম্বরের কথা বলা হচ্ছে, সেটা ‘অতিরঞ্জিত’।