অস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জার্মান ভন্ডামি: ইউক্রেন
চলমান সংকটে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ না করার সিদ্ধান্তের কথা আগেই জানিয়েছে জার্মানি। বার্লিনের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন জার্মানিতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রিজ মেলনিক। তিনি এ সিদ্ধান্তকে ‘জার্মান ভন্ডামি’ বলে মন্তব্য করেছেন। খবর সিএনএনের।
এক টুইট বার্তায় আন্দ্রিজ মেলনিক বলেন, ‘রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের আত্মরক্ষার জন্য কোনো অস্ত্র দেওয়া হবে না। কিন্তু শুধু ২০২০ সালে রাশিয়ায় ৩৬৬ মিলিয়ন ইউরোর দ্বৈত-ব্যবহারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে, যা দেশটির অস্ত্র উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।’ মেলনিক এর আগেও টুইটারে জার্মানদের কাছে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র চেয়েছিলেন।
গত মাসে জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেশট ঘোষণা দেন যে, রাশিয়ার-ইউক্রেন উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় তারা ইউক্রেনে ৫ হাজার সামরিক হেলমেট সরবরাহ করবে। একটি ফিল্ড হাসপাতাল এবং চিকিৎসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা ছাড়াও জার্মানি ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে এসব সরবরাহ করা শুরু করেছে।
সাংবাদিকদের ক্রিস্টিন ল্যামব্রেশট বলেন, ‘জার্মান সরকার খুব স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা সংঘাতপূর্ণ এলাকায় কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্র বা অস্ত্র সরবরাহ করব না। কারণ আমরা সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে দিতে চাই না।’ তিনি আরও বলেন, জার্মানি মনে করছে, এখনো আলোচনার মাধ্যমে সেখানে শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের মার্চে রুশ সেনারা ইউক্রেনের অংশ ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এর পর থেকে সেখানে মস্কো-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাদের লড়াই চলছে। এ লড়াইয়ে অন্তত ১৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
এখন পুরো ইউক্রেনে রুশ সেনা অভিযানের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। যেকোনো সময় ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাতে পারে দেশটি। এ জন্য পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পূর্ব ইউরোপে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো।
রাশিয়া বরাবরই পশ্চিমাদের তোলা এ অভিযোগ অস্বীকার করছে। দেশটি বলছে, ইউক্রেনে হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা মস্কোর নেই। মহড়ার অংশ হিসেবে সেনা সমাবেশ ঘটানো হয়েছে।
তবে মস্কোর এমন দাবি মানতে নারাজ পশ্চিমারা। গত শুক্রবার ওয়াশিংটন জানায়, যেকোনো সময় বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালানোর জন্য যথেষ্ট সেনা ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন করেছে রাশিয়া। সম্ভাব্য রুশ সামরিক অভিযানের আশঙ্কা থেকে নিজেদের নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন ছাড়তে বলা হয়েছে।
সম্ভাব্য রুশ সামরিক আগ্রাসন নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই শনিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় পুতিনকে সতর্ক করে বাইডেন বলেন, সামরিক আগ্রাসনের কারণে ইউক্রেনে বড় ধরনের মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে। এর কারণে রাশিয়ার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্ররা দ্রুত এর কড়া জবাব দেবে। রাশিয়াকে এ জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে। প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অমূলক আশঙ্কা চূড়ায় পৌছেছে।