আজভস্তাল কারখানা থেকে উদ্ধার করা হলো নারী-শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের

আজভস্তাল স্টিল কারখানা থেকে উদ্ধার হওয়া বেসামরিক নাগরিকেরা
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের অবরুদ্ধ মারিউপোল শহরের আজভস্তাল স্টিল কারখানা থেকে সব নারী, শিশু ও বয়স্ক বেসামরিক নাগরিককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। খবর এএফপির।

জাতিসংঘ ও রেডক্রসের সমন্বয়ে এক সপ্তাহ আগে কারখানা থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। এ দুই সংস্থার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আজভস্তাল কারখানা থেকে সব নারী, শিশু ও বয়স্ককে সরিয়ে নেওয়ার খবরটি নিশ্চিত করা হয়নি।ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক নাগরিকদের সরানোর বিষয়টি জানিয়েছে। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে অনেক কম নাগরিককে সরানোর তথ্য জানানো হয়েছে।

আজভস্তাল স্টিল কারখানাটি মারিউপোলে ইউক্রেনীয় সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সবশেষ স্থান। কয়েক সপ্তাহ ধরে কারখানাটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে রাশিয়া। সেখানে অবস্থানরত আধা সামরিক আজভ ব্যাটালিয়নের সদস্যদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে আসছে তারা। তবে ইউক্রেনের যোদ্ধারা রুশ সেনাদের কাছে কখনোই আত্মসমর্পণ করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন।

আজভ যোদ্ধাদের সঙ্গে কারখানাটিতে ইউক্রেনের বেশ কিছুসংখ্যক বেসামরিক নাগরিকও অবস্থান করছিলেন।

গতকাল বেসামরিক নাগরিকদের কোথায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেন, মারিউপোলে মানবিক পদক্ষেপের অংশটি এখন সম্পন্ন হলো। এর আগে যেসব বেসামরিক নাগরিকদের উদ্ধার করা হয়েছিল, তাদের ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পৌঁছাতে কয়েক দিন সময় লেগেছিল।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ৩০০–এর বেশি বেসামরিক নাগরিককে কারখানাটি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে রুশ মন্ত্রণালয় যে সংখ্যা উল্লেখ করেছে, তা অনেক কম। রুশ মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুসারে, ৩ দিনে আজভস্তাল স্টিল কারখানা থেকে ৫১ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের সেনাসদস্যদের মারিউপোল থেকে সরিয়ে নিতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

আজভস্তাল স্টিল কারখানার ভেতরে থাকা ইউক্রেনীয় সেনারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে বের করতে লড়াই বন্ধ রাখার জন্য সাদা পতাকার ব্যবস্থা করছে দুই পক্ষ।

এর আগেও শতাধিক বেসামরিক নাগরিককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতিসংঘ ও রেডক্রস। তবে স্থল মাইন ও গোলা নিক্ষেপের কারণে সে প্রচেষ্টা বন্ধ হয়ে যায়।

গত বৃহস্পতিবার থেকে মারিউপোলে রাশিয়া হামলা জোরদার করেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের এক সামরিক কমান্ডার দাবি করেন, হামলা বাড়িয়ে যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে রাশিয়া। এ কারণে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করা যাচ্ছে না। আজভস্তালের ভেতরে ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা রুশ সেনাদের সঙ্গে ‘কঠিন, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে’ লিপ্ত বলে জানিয়েছেন আজভ রেজিমেন্টের এক কমান্ডার ডেনিস প্রোকোপেঙ্কো।

আজভস্তাল থেকে বেসামরিক নাগরিকদের উদ্ধারের পর এবার সেখানে থাকা প্রায় দুই হাজার ইউক্রেনীয় যোদ্ধাকে উদ্ধারের জন্য দেশটির সরকারের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে।
মারিউপোলের দখল নেওয়াটা রুশ সেনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মধ্য দিয়ে ক্রিমিয়া ও দনবাস অঞ্চলের মধ্যে একটি স্থল সংযোগ গড়ে তুলতে পারবে তারা। পাশাপাশি এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগর উপকূলবর্তী ৮০ শতাংশের বেশি এলাকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সুযোগ পাবে রাশিয়া।