ইউক্রেনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এখন পোল্যান্ড সীমান্তে ছুটছে

ইউক্রেনের জিতুমির পলিটেকনিক স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সোহেল রানা সতীর্থদের নিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে যাচ্ছেন
ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার মো. সোহেল রানা প্রায় তিন বছর ধরে থাকেন ইউক্রেনের জিতুমিরে। রাজধানী কিয়েভ থেকে জিতুমিরের দূরত্ব ১৬৫ কিলোমিটারের মতো। সোহেল পড়েন জিতুমির পলিটেকনিক স্টেট ইউনিভার্সিটিতে, কম্পিউটার সায়েন্সে।

আজ বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে কথা হলো সোহেলের সঙ্গে। তখন তিনি গাড়িতে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যাবেন প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরের লিভিভ এলাকায়। এটি পোল্যান্ডের সীমান্ত এলাকা। সেখান থেকে দেশে ফেরার ইচ্ছা আছে তাঁর এবং সঙ্গীদের।

গতকাল ভোরে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। রাজধানী কিয়েভেও হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। আজও হামলার খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এর মধ্যে গতকাল ইউক্রেনে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ছাড়া সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছে পোল্যান্ড। পোল্যান্ডের ওয়ারশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস আজ শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ছাড়া পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বৈধ পাসপোর্টধারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে তাঁদের পাসপোর্ট দেখিয়ে পোল্যান্ডে ঢুকতে পারবেন।

এ খবরে সোহেলের মতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ছুটছেন পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে। সোহেল জানান, তাঁর ইউনিভার্সিটিসহ জিতুমির এলাকায় থাকেন প্রায় ৪০ জন বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে ইউনিভার্সিটির ১৮ জন ইতিমধ্যে হল ছেড়ে পোল্যান্ডের দিকে চলে গেছেন। আর তাঁরা দুই গাড়িতে আটজন যাচ্ছেন আজই। বাকি থাকল চারজন। তাঁদের আর্থিক কিছু সমস্যা আছে। সমস্যা মিটলে তাঁরাও পোল্যান্ডের দিকে আসবেন।

সোহেলের সঙ্গে আছেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের ইয়াছিন আরাফাত, ঝালকাঠির মুনতাকিম আন্নি, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির সাদিকুর রহমান।

জিতুমির পলিটেকনিক স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস
ছবি: সংগৃহীত

সোহেল জানান, গতকাল জিতুমির শহরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। সেটি হয় এখানে থাকা একটি সেনা ঘাঁটিতে। তাতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বটে, তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘাঁটিটি। এর পর থেকে তাঁদের মনে শঙ্কা জাগে প্রবলভাবে। তাই পোল্যান্ডের দিকে যাত্রা।

সোহেলের কথা, ‘আমরা একটি নিরাপদ জায়গা খুঁজছি। পোল্যান্ডে গিয়ে সেই জায়গা খুঁজব। সেখান থেকে দেশে ফেরার ইচ্ছাটাই প্রবল। এখন দেশে যাওয়াই মূল লক্ষ্য।’

যুদ্ধের বাজারে জিনিসের পাশাপাশি সবকিছুর দাম বেড়েছে বলে জানান সোহেল। এই যেমন আগে জিতুমির থেকে গাড়িতে মাথাপিছু ভাড়া ছিল ৬৫০ রিবনা (ইউক্রেনের মুদ্রা)। তাঁদের চারজনকে এখন দিতে হচ্ছে সাড়ে আট হাজার রিবনা।

সোহেল বলছিলেন, ‘কিছু করার নেই। এখন আগে নিরাপত্তা। টাকার কথা ভাবলে হবে না।’

৬০০ কিলোমিটার পথ ধরে পোল্যান্ড সীমান্তের লিভিভে যেতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লাগতে পারে বলে জানান সোহেল। তারপর পোল্যান্ডে ঢুকে থাকবে বাংলাদেশে আসার অপেক্ষা।