করোনা রোধে ইতালিতে নতুন পদক্ষেপ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে প্যারিসের রাতের জীবনযাত্রায় বদল আসছে
ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিধিনিষেধ জোরদার করতে নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইতালি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জিওসেপ্পে কোন্তে বলেন, আবার লকডাউন পরিস্থিতি এড়াতে এসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।  

বিবিসির খবরে জানা যায়, ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসমাগমস্থল স্থানীয় সময় রাত ৯টার পরে বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে মেয়রদের। রেস্তোরাঁগুলো খোলার সময় ও ক্রেতাদের আসার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হবে।

ইতালিতে স্থানীয় সময় গতকাল রোববার ১১ হাজার ৭০৫ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। দ্বিতীয় দিনের মতো দেশটিতে করোনায় সর্বোচ্চ সংক্রমিত হন। এর আগে শনিবার ১০ হাজার ৯২৫ জন করোনায় সংক্রমিত হন।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। বিবিসির খবরে জানা যায়, দেশটিতে ৪ লাখ ১৪ হাজার মানুষ করোনায় সংক্রমিত। দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ হাজার ৫০০ জনের।

গতকাল সন্ধ্যায় টিভিতে দেওয়া এক বক্তব্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সময় নষ্ট করতে পারি না। লকডাউন ঠেকাতে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে হবে। সরকার এই কাজ করবে। তবে প্রত্যককে এতে অংশ নিতে হবে।’

ইতালির প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘করোনারোধে প্রাথমিক সতর্কতা হলো মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও হাত ধোয়া। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা করার সময় এসব পরিস্থিতির দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। এই পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা থাকা প্রয়োজন।’

স্কুলগুলো শুরুর সময় পিছিয়ে দেওয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। মাঝরাতে বার ও রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করা হবে। তবে সন্ধ্যা ৬টার পরে টেবিলে খাবার দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। দলে ছয়জনের বেশি থাকলে ও কোনো উৎসব হলে বাতিল করা হবে। সাত দিনের মধ্যে জিম ও সাঁতারে নতুন নিয়ম চালু করা হবে।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে বিভিন্ন দেশ তাদের বিধিনিষেধ জোরদার করেছে। গত শনিবার ফ্রান্সে নতুন করে ৩২ হাজার ৪২৭ জন করোনায় সংক্রমিত হন। গতকাল রোববার আরও ৩০ হাজার এতে সংক্রমিত হতে পারেন।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রায় এক মাস ধরে কারফিউ চলছে। কারফিউ ভাঙলে ১৫৮ ডলার জরিমানা হতে পারে।

আজ সোমবার থেকে বেলজিয়ামের সব বার ও রেস্তোরাঁ চার সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। কারফিউ জারি করা হবে। রাত আটটার পর থেকে মদ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।

বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্দার দ্য ক্রো বলেন, আসছে সপ্তাহগুলোতে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।

সুইজারল্যান্ডে গতকাল রোববার করোনায় সংক্রমণ বেড়েছে। দেশটির সরকার আজ থেকে ঘরের মধ্যে জনসমাগমের নির্দেশনা দিয়েছে। মুখে মাস্ক পরতে বলেছে। ১৫ জনের বেশি মানুষ একসঙ্গে জড়ো হওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

চেক প্রজাতন্ত্রের সরকার গতকাল রোববার জানায়, লকডাউন আরোপ করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে তারা আরও দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করবে। দেশটির স্কুলগুলোতে সামাজিক দূরত্বের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

আয়ারল্যান্ড আজ থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। খুব প্রয়োজনীয় নয়, এমন ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করার কথা ভাবছে দেশটির সরকার।

জার্মানিতেও গত শনিবার করোনার নতুন সংক্রমণ ঘটেছে। দেশটির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল মানুষকে ঘরে থাকতে ও ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন।
নেদারল্যান্ডসেও আংশিক লকডাউন চালু করা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৮৪ হাজার ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে আজ সকাল নাগাদ করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগী ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৬ জন। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় মোট মারা গেছেন ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৩৫ জন। বিশ্বে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ২ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার ৭ জন।

বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮১ লাখ ৫২ হাজার ৯৩ জন। মারা গেছেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৬৬৯ জন।

ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫৫১ জন। দেশটিতে মারা গেছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৩১ জন। ব্রাজিল আছে তৃতীয় অবস্থানে। ব্রাজিলে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫২ লাখ ২৪ হাজার ৩৬২ জন। দেশটিতে মারা গেছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৫ জন। তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। আর্জেন্টিনা পঞ্চম। কলম্বিয়া ষষ্ঠ। সপ্তম স্পেন। অষ্টম ফ্রান্স। পেরু নবম। মেক্সিকো দশম।