কিয়েভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

কিয়েভের একটি নয়তলা ভবনে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আগুন লেগে যায়।
ছবি : এএফপি

বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এক দিন পরই রোববার এ হামলা চালানো হলো। এতে কিয়েভ কেঁপে ওঠে। এই হামলা এমন এক সময় চালানো হলো, যখন শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭–এর নেতারা জার্মানিতে সম্মেলনের প্রস্তুতির নিচ্ছেন। এর আগে গত শনিবার ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় মস্কো।

রোববার সকালে কিয়েভের মধ্যাঞ্চলে চারটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। পরে কিয়েভের দক্ষিণাঞ্চলের উপকণ্ঠে আরও দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে রুশ বাহিনী ব্যাপক হামলা চালায়। কয়েক সপ্তাহ পর কিয়েভে এই হামলার ঘটনা ঘটল।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের প্রশাসনিক প্রধান অ্যান্ড্রি ইয়ারমাক বলেন, রুশ সেনারা আবার কিয়েভে আক্রমণ শুরু করেছেন। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি আবাসিক ভবন ও একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ধ্বংস হয়েছে।

ইউক্রেনের পুলিশ প্রধান আইহোর ক্লাইমেঙ্কো জাতীয় টেলিভিশনে বলেন, রুশ বাহিনীর হামলায় পাঁচজন আহত হয়েছেন।

যুদ্ধের প্রাথমিক দিনগুলোতে কিয়েভের উপকণ্ঠে রুশ সেনাদের প্রতিহত করেছিলেন ইউক্রেনের সেনারা। এর পর থেকে সেখানে জীবনযাত্রা মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। চলতি মাসে কিয়েভে কোনো হামলা হয়নি। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো বলেন, গতকালের হামলায় নয়তলা একটি ভবন ধ্বংস হয়েছে এবং তাতে আগুন ধরে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে লোকজন চাপা পড়েছে। সেখান থেকে ৯ বছর বয়সী এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুর মাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

আঞ্চলিক গভর্নর আলেকজান্দার স্কিচকো বলেন, এত দিন পর্যন্ত বোমা হামলার বাইরে থাকা চেরস্কি শহরে গতকাল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে অবশ্য বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। তবে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে যুদ্ধাপরাধ করছেন রুশ সেনারা।

শনিবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ নেওয়ার দাবি করেন রুশ সেনারা। ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। সেভেরোদোনেৎস্কের পতন ইউক্রেনের জন্য একটি বড় পরাজয় হিসেবে দেখছে ক্রেমলিন।

সেভেরোদোনেৎস্ক মস্কোর দখলে চলে যাওয়া মানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে তাদের দখল পাকাপোক্ত হলো। পূর্বাঞ্চলের দনবাসের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক প্রদেশের বিশাল এলাকা দখলে নিয়ে ইতিমধ্যে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে রুশপন্থীরা। রাশিয়া তাতে স্বীকৃতিও দিয়েছে।

এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই যুদ্ধ পাঁচ মাসে গড়িয়েছে। যুদ্ধের ফলে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। খাদ্যের দাম আকাশছোঁয়া। ক্রমবর্ধমান এই সংকটে নানা কারণে চাপের মুখে পড়েছে কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা। এই অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে করণীয় এবং অর্থনৈতিক গতিপথ ঠিক রাখতে গতকাল জার্মানির মিউনিখে তিন দিনের জি-৭ সম্মেলন শুরু হয়েছে। শিল্পোন্নত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও জাপান—সাতটি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা ওই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের ঐক্য ধরতে রাখতে হবে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার লক্ষ্যে এটা কার্যকরী করতে যা বর্তমানে ঘটছে এবং বন্ধু ও অংশীদারেরা কী ধরনের চাপ অনুভব করছে, তা নিয়ে সত্যিকার খোলামেলা আলোচনা আপনারা দেখতে পারবেন।’

আরও পড়ুন

জি-৭–এর নেতারা রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে সম্মেলন থেকে নতুন পদক্ষেপ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাশিয়ার হামলার কারণে পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞাসহ বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। পাল্টা রাশিয়ার পক্ষ থেকেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধসহ ইউরোপের দেশগুলোর প্রতি পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল জার্মানির আল্পসে জি-৭ সম্মেলনের আগে বাইডেন শলৎজের প্রশংসা করেন।

বাইডেন বলেন, ‘আমাদের এক থাকতে হবে। ঐক্য বজায় রাখতে হবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আশা করছেন যে কোনোভাবে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও সাতটি উন্নত অর্থনীতির জোট জি-৭–এর সম্পর্ক ভেঙে যাবে। কিন্তু আমাদের এ বন্ধন ভেঙে দেওয়া যাবে না।’

জি-৭ দেশের নেতারা রুশ স্বর্ণ বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সম্মেলন শুরু করেছেন। পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নিয়ে সম্মেলনের শুরুতে শান্তি আলোচনার ওপর জোর দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া।

বেলারুশকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র দেবে রাশিয়া

অন্যদিকে বিবিসি জানায়, পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশকে পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন স্বল্পপাল্লার ইস্কান্দার-এম ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়েছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বেলারুশকে এই ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা সরবরাহ করা হবে। স্থানীয় সময় শনিবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠকের সময় এই ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার অঙ্গীকার করেন পুতিন।

আরও পড়ুন