জনগণের ওপর ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে পশ্চিমারা অন্ধ: পুতিন

পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্কে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন একজন। তিনি যেখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, তার পাশের জানালাগুলোও ওই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৫ মার্চ, দোনেৎস্ক, ইউক্রেনছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও মাকিভকা শহরে রুশপন্থীদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা নিয়ে সরব হলেও, এ বিষয়ে একেবারে নিশ্চুপ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ বিষয়টি সামনে এনেছেন।

মস্কোর স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সঙ্গে ফোনালাপে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। ক্রেমলিনের জনসংযোগ বিভাগের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুতনিকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থীদের ওপর ইউক্রেন বাহিনীর হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যায়িত করেন পুতিন।

২০১৪ সালে কিয়েভে বিক্ষোভের মুখে মস্কোপন্থী সরকারের পতনের পর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ক্রিমিয়া অঞ্চল দখলে নেয় রাশিয়া। সে সময়ই পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে নিজেদের সরকার গঠনের ঘোষণা দেয় রুশপন্থী বিদ্রোহীরা। এর পর থেকেই এই দুই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ওপর ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ও উগ্র জাতীয়তাবাদীরা হামলা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রাশিয়ার।

রুশপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্কে বিধ্বস্ত ক্ষেপণাস্ত্রের অংশ বিশেষ। ১৪ মার্চ, দোনেৎস্ক, ইউক্রেন
ছবি: রয়টার্স

স্পুতনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ ১৪ মার্চ দোনেৎস্কে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় ২০ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। আহত হয় আরও ৩৫ জন। ওই ক্ষেপণাস্ত্রে গুচ্ছ বোমা ছিল বলে দাবি করে দোনেৎস্ক কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা ও যুদ্ধাপরাধ আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ প্রতিনিধিদল।

তবে ওই হামলার ঘটনা ইউক্রেন অস্বীকার করেছে। আল-জাজিরা টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তব্যে দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লিওনিড মাতিউখিন বলেন, ‘সেটি (ক্ষেপণাস্ত্র) নিঃসন্দেহে রাশিয়ার রকেট বা অন্য কোনো অস্ত্র। এ নিয়ে কথা বলা কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

এদিকে গত কয়েক দিনে পুতিনকে ‘খুনি স্বৈরশাসক’, ‘ঠগবাজ’ ও ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর এ ধরনের বক্তব্য অপমানজনক বলে উল্লেখ করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তাঁর ভাষ্য, বোমা হামলা করে সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে, এমন একটি দেশের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এমন বিবৃতি অগ্রহণযোগ্য।

গণহত্যার অভিযোগ

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আসছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। ইউক্রেন সরকারকে সামরিকীকরণ থেকে বিরত রাখতে ও নাৎসি প্রভাবমুক্ত করতেই এ অভিযান বলে দাবি করে আসছেন তিনি।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে রুশভাষীদের ওপর ইউক্রেনের সেনাবাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। এই দুই অঞ্চল দোনবাস নামে পরিচিত। ২০১৪ সাল থেকেই দোনবাসে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। দুই পক্ষের সংঘাতে গত আট বছরে সেখানে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বেসামরিক লোকজনও রয়েছে। তবে গণহত্যা চালানোর বিষয়টি আগে থেকেই নাকচ করে আসছে ইউক্রেন।

আলোচনা বিলম্বিত করতে চাচ্ছে ইউক্রেন

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সঙ্গে ফোনালাপে পুতিন অভিযোগ করেন, সংকট সমাধানে অবাস্তব সব প্রস্তাব এনে দুদেশের মধ্যে আলোচনাকে আরও বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে ইউক্রেন সরকার।

এ নিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, সংকট সমাধানে একটি খসড়া চুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে। রাশিয়ার প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে একই সদিচ্ছা দেখানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।