জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক পুতিনের

ভ্লাদিমির পুতিন

ইউক্রেন সীমান্তে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের তলব করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সোমবার কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকও করেন তিনি। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে কয়েক দিন ধরে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা ও সংঘাতের মধ্যে পুতিনের এ বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সোমবার সীমান্তে পাঁচ ইউক্রেনীয়কে গুলি করে হত্যার দাবি করেছে রাশিয়ার সেনারা।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন অতি আসন্ন—যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বারবার এমন দাবি করে আসছে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি যাতে যুদ্ধের দিকে না গড়ায়, সে জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চালানো হচ্ছে। তবে মস্কোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের যুদ্ধের কোনো খায়েশ নেই। পশ্চিমা বিশ্ব সমস্যা সমাধান না করে যুদ্ধে উসকানি  দিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরাসরি ঘোষণা দেন, পুতিনের সঙ্গে তিনি আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসতে প্রস্তুত। তবে মস্কো বলেছে, বৈঠকের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই ক্রেমলিনের।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস–এর অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার রাশিয়ার শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনির্ধারিত জরুরি বৈঠক করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিন।

বৈঠকের আহ্বায়ক পুতিন নিজে। বৈঠকের আগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, এটা কোনো নির্ধারিত বৈঠক নয়। হঠাৎ বৈঠকটি ডাকা হয়েছে। পুতিন সবার কথা শোনার পর বক্তব্য দেবেন।

কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে সোমবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে শিগগিরই আগ্রাসন চালাবে। ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’ অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন ও রাশিয়ার নেওয়া সব কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে এগুলো ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনেরই অংশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনও একাধিকবার বলেছে, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে যাচ্ছে, এটা তিনি নিশ্চিত। তবে হামলা হলে মস্কোকে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে রাজি বাইডেন

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন সংকট নিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি থাকার কথা জানিয়েছেন বাইডেন। ওই বৈঠকের প্রস্তাব জানিয়েছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। পুতিনও ওই বৈঠকে সম্মত বলে ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানিয়েছে। তবে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়া যদি তার প্রতিবেশী ইউক্রেনকে আক্রমণ না করে, এমন শর্তেই বৈঠকটি হতে পারে।
বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে শুরু হবে। এ বিষয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবেন। এ বৈঠকের সময় তাঁরা বাইডেন ও পুতিনের মধ্যকার শীর্ষ বৈঠকের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবেন। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে গতকাল জানানো হয়েছে, ওই বৈঠকের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। বৈঠকের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনাও নেই।

ইউক্রেনীয়দের ‘হত্যার’ তালিকা করেছে রাশিয়া: ‍যুক্তরাষ্ট্র

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালে যেসব ইউক্রেনীয়কে ‘হত্যা করা হবে কিংবা ক্যাম্পে পাঠানো হবে’, তার তালিকা এরই মধ্যে তৈরি করেছে রাশিয়া। গোয়েন্দারা এমন তথ্যই দিয়েছেন বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। ওয়াশিংটন পোস্ট–এর খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাশেলেটের কাছে একটি চিঠি লিখে ‍যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি অবহিত করেছে।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সতর্ক অবস্থানে ইউক্রেনের সেনারা
ছবি : এএফপি

পত্রিকাটির দাবি, রোববার রাতে তারা এ চিঠির অনুলিপি হাতে পেয়েছে। চিঠিতে লেখা হয়, ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রে তারা যে খবর পেয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন-পরবর্তী পরিকল্পনা করছে রাশিয়া। আগ্রাসনের ঘটনায় ইউক্রেনে তারা কাকে কাকে হত্যা করবে, গুম করবে বা নির্যাতন শিবিরে পাঠাবে, তার তালিকা তৈরি হচ্ছে।’
এদিকে এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় অনুপ্রবেশের সময় পাঁচ নাশকতাকারীকে হত্যার দাবি করেছে রাশিয়ার সেনারা। গতকাল সকালে এক বিবৃতিতে রুশ সেনাবাহিনী এ দাবি করে। তারা বলেছে, রোস্তভ এলাকায় একটি গ্রামের কাছে ওই ঘটনা ঘটে।