জার্মানিতে করোনায় সংক্রমণের হার বাড়ছে

জার্মানির বার্লিনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য রাস্তায় আঁকা বৃত্ত। ১ ডিসেম্বর, বার্লিন
ছবি: রয়টার্স

জার্মানিতে করোনায় সংক্রমণের হার ঠেকাতে নানা বিধিনিষেধ জারি করেও সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার রোধ করা যাচ্ছে না। তবে করোনায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা এখনো আয়ত্তের মধ্য রয়েছে বলে জানিয়েছে জার্মানি সরকার।

২৫ ডিসেম্বর আসন্ন বড়দিনকে কেন্দ্র করে নতুন যে সব বিধি জারি করা হয়েছে তা আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। জার্মানির প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক ও মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা মানবদেহে ব্যবহারের জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শহরে টিকাকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।

জার্মানির সংক্রমণ রোগ বিষয়ের গবেষণা কেন্দ্র রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট আজ জানিয়েছে, শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় জার্মানিতে নতুন করে ২৩ হাজার ৪৪৯ জন করোনাভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছেন এবং ৪৩২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এর আগে গত বুধবার সর্বোচ্চ ৪৮৭ জনের মৃত্যু ঘটছে। এই নিয়ে করোনার সংক্রমণে জার্মানিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ হাজার ২৬০। রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট আরও জানিয়েছে, শীতকালে করোনাভারাসের সংক্রমণ কেন এত আগ্রাসী হয়ে উঠছে, বিষয়টি নিয়ে তারা গবেষণা করছে।

জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, জার্মানিতে জারি করা লকডাউন-ব্যবস্থা যথেষ্ট কার্যকর কি না, বিষয়টি নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। তা ছাড়া এভাবে আমরা পুরো জাতিকে সংশয়ের মধ্য রাখতে পারি না।

১ ডিসেম্বর জার্মানির প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক ও মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশে ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য আমস্টারডামে অবস্থিত ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সির (এমা) কাছে পাঠানো হয়েছে। এই মুহূর্তে ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি তাদের কাছে জমা দেওয়া গবেষণালব্ধ তথ্য যাচাই করছে। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মডার্নাও তাদের ভ্যাকসিন ইইউ দেশগুলোতে বাজারজাতের জন্য এমার কাছে জমা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, তারা করোনার টিকার বিষয়ে বায়োএনটেক ও মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে। এই টিকা জরুরি ব্যবহারে সম্ভাব্য তালিকাভুক্তির জন্য তারা প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করছে। এমার নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো নতুন ওষুধ অনুমোদন করতে ২২ দিন সময় নেয়। কিন্তু ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশন করোনা টিকার ক্ষেত্রে দ্রুত অনুমোদনের অনুরোধ জানিয়েছে।

জার্মানির মাইঞ্ছ শহরে অবস্থিত বায়োএনটেকের প্রধান উগুর সাহিন জানিয়েছেন, আমাদের করোনা প্রতিরোধী টিকাটি ৭০ ডিগ্রি মাইনাস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। তবে তা পরিবহন ও ব্যবহারের আগ পর্যন্ত পাঁচ দিন সাধারণ ফ্রিজের তাপমাত্রায় রাখা যাবে। এই প্রতিষেধক টিকা পরিবহনের জন্য বিশেষ কোল্ডবক্স তৈরি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন উগুর সাহিন।

জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান জানিয়েছেন, ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সির অনুমোদন পাওয়ামাত্র যাতে করে করোনার টিকাটি জার্মানিতে দ্রুত ব্যবহার করা যায়, সেই বিষয়ে জার্মানির ১৬ রাজ্যে একাধিক টিকাকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম এই ভ্যাকসিন পাবেন প্রবীণ বা পূর্ববর্তী অসুস্থ ব্যক্তি বা করোনায় সংক্রমিত লোকজনকে নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন নার্সিং এবং হাসপাতালে কাজ করছেন, সেই সব ব্যক্তিরা, বলে জানিয়েছেন জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি এই বছরের ক্রিসমাস অনুষ্ঠানে সবাইকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। করোনভাইরাসে প্রতিদিন জার্মানিতে প্রায় ৪০০ মানুষের মৃত্যুকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে তিনি জানিয়েছেন।

রাজধানী বার্লিনে অবস্থিত রবার্ট কক ইনস্টিটিউটের সভাপতি লোথার ভিলার জানিয়েছেন, ‘করোনাভারাস একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। আমরা আমাদের দৈনন্দিন আচরণ থেকেই এই সংক্রমণ রোধ করতে পারি। মানুষর আচরণের কারণেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে এবং নানা বিধি সত্ত্বেও আতঙ্কজনকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি বৃদ্ধাশ্রম ও প্রবীণ লোকজনের বিষয়ে সবাইকে আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করছেন।