জার্মানিতে নতুন সংক্রমণ সুরক্ষা আইন পাস

বার্লিনের রাইখস্ট্যাগ ভবনে বসে জার্মানির পার্লামেন্ট অধিবেশন।
ছবি: রয়টার্স

করোনা সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জার্মানির বুন্ডেস্টাগ বা পার্লামেন্টে গতকাল বুধবার সংক্রমণ সুরক্ষা আইন পাস হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রুখতে জার্মানির ১৬ রাজ্যে লকডাউনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন নির্বাহী আদেশ থাকলেও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল না। নতুন আইনে বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলোতে রাতে কারফিউ ব্যবস্থাসহ স্কুলগুলো বন্ধ, জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর বিধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

৮ কোটি ৩০ লাখ লোক অধ্যুষিত মধ্য ইউরোপের দেশ জার্মানিতে লকডাউন চলছে। এরপরও প্রতিদিন প্রায় গড়ে ২০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত ৮০ হাজার ৬৩৪ জন মানুষ করোনা সংক্রমণে মারা গেছেন।

পার্লামেন্টে পাস হওয়া নতুন সংক্রমণ সুরক্ষা আইন এখন সাড়া জার্মানিজুড়ে বলবৎ হবে। ক্ষমতাসীন আঙ্গেলা ম্যার্কেলের জোট সরকারের এই সুরক্ষা আইনের পক্ষে ৩৪২ জন এবং ২৫০ জন বিপক্ষে ভোট দেন। আর ৬৪ জন সংসদ সদস্য ভোটদানে বিরত ছিলেন।

নতুন আইনে বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলোতে রাতে কারফিউ ব্যবস্থাসহ স্কুলগুলো বন্ধ, জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর বিধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জার্মানির পার্লামেন্টে এই আইন পাসের পর বুন্দেশরাট বা ফেডারেল কাউন্সিলের অনুমোদন ও জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার স্বাক্ষর করবেন। আগামী শনিবার থেকে এই নতুন সুরক্ষা আইন কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

জার্মানির যেসব এলাকায় প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে সাত দিন হিসাবে প্রতিদিন সংক্রমণের সংখ্যা শতাধিক হবে, সেই সব এলাকায় রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ থাকবে। তবে চিকিৎসক, নার্সসহ যাঁরা কাজে যাবেন, তাঁদের জন্য এই নিয়ম বলবৎ হবে না। একটি পরিবারের সঙ্গে শুধু একজন অতিথি মিলিত হতে পারবেন।

স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে সাত দিনের হিসাবে প্রতিদিন সংক্রমণের সংখ্যা ১৬৫–এর বেশি হলে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে কম সংক্রমিত এলাকায় যেসব স্কুল খোলা থাকবে, সেখানে শিক্ষক ও ছাত্রদের সপ্তাহে দুবার করোনা টেস্ট করা হবে। যতটা সম্ভব বাড়ি থেকে অফিস করতে হবে। হোম অফিসের সুযোগ না থাকলে সপ্তাহে এক দিন কর্মস্থলে করোনা টেস্ট করতে হবে। পাঁচজন শিশু একসঙ্গে খেলতে পারবে। জার্মানির ফুটবল লিগ বা বুন্দেসলিগা বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা আগের মতোই দর্শক ছাড়া আয়োজিত হবে।

এ ছাড়া চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সুইমিংপুল, লাইব্রেরি, ডিসকো, মিউজিক ক্লাব, থিয়েটার অপেরা বন্ধ থাকবে। মৃতদেহ সৎকার অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৩০ জন উপস্থিত হতে পারবেন। খাদ্যপণ্যের সুপারমার্কেট, ওষুধ ও বইয়ের দোকান ও সেলুনগুলো খোলা থাকবে।

এই নতুন সংক্রমণ সুরক্ষা আইন আপাতত আগামী ২১ জুন পর্যন্ত জারি থাকবে। জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়ান স্পান এই নতুন আইনটির বিষয়ে বলেছেন, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নতুন আইনটি খুবই উপযোগী।

জার্মান পার্লামেন্টে এই আইনটি পাসের সময় পার্লামেন্টসংলগ্ন এলাকায় এই আইনের বিরুদ্ধে ‘কয়ার দেঙ্কার’ বা বিকল্প চিন্তা নামের একটি সংগঠনের ডাকে আট হাজার লোক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। অননুমোদিত এই বিক্ষোভ থেকে পুলিশ ২৫০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। জার্মানিতে এই সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যকলাপকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। রাজধানী বার্লিনে গতকাল বুধবার প্রায় দুই হাজার পুলিশ এই বিক্ষোভ দমনে রাস্তায় নামে। ২৫০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার সময় পথচারীরা হাত তালি দিয়ে পুলিশকে অভিনন্দন জানায়।