জার্মানিতে সমাধিক্ষেত্রের সামনে লাশবাহী গাড়ির সারি

জার্মানির সাক্সেন রাজ্যের সমাধিক্ষেত্রগুলোর কর্মীদের করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ সৎকারে হিমশিম খেতে হচ্ছে
ছবি: রয়টার্স

জার্মানির সবচেয়ে করোনা-উপদ্রুত সাক্সেন রাজ্যের হিমঘরগুলোতে লাশ রাখার স্থান সংকুলান হচ্ছে না।

করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশের সৎকারে রাজ্যটির সমাধিক্ষেত্রগুলোর কর্মীরা ২৪ ঘণ্টায় চার পালায় কাজ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। বিভিন্ন সমাধিক্ষেত্রের সামনের সড়কে লাশবাহী গাড়ির সারি তৈরি হচ্ছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল চলমান লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়ানোর পাশাপাশি কড়াকড়ি আরোপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

করোনার বিস্তার রোধে গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জার্মানিতে কঠোর লকডাউনের বিধি জারি আছে। তবে তাতে করোনার বিস্তার থামছে না।

জার্মানির সংক্রামক রোগ বিষয়ের গবেষণা কেন্দ্র রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, শনিবার সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৮৩ জনের।

এ নিয়ে জার্মানিতে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

জার্মানিতে গতকাল থেকে আজ রোববার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৭ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় মারা গেছেন প্রায় ৫০০ জন। তবে এই হিসাব পূর্ণাঙ্গ নয়।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট রন্ডসাউ শনিবার করোনা-উপদ্রুত সাক্সেন রাজ্যের সংবাদে জানা গেছে, সেখানকার হিমঘরগুলোয় লাশ রাখার স্থান সংকুলান হচ্ছে না। করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ সৎকারে সমাধিক্ষেত্রগুলোর কর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় তাঁরা চার পালায় কাজ করছেন।

রাজ্যের সমাধিক্ষেত্রগুলোর প্রধান সমন্বয়কারী ইয়র্গ স্কালডাখ বলেছেন, মাঝেমধ্যেই সমাধিক্ষেত্রগুলোর সামনের সড়কে কয়েক শ মিটার এলাকায় লাশবাহী গাড়ির সারি তৈরি হচ্ছে।

ইয়র্গ স্কালডাখ জানান, গত নভেম্বরে ২৫০ জন ও ডিসেম্বরে ৫৮৭ জন করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ তাঁরা সৎকার করেছেন।

স্কালডাখ বলেন, রাজ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ লকডাউন লঙ্ঘন করছেন। লকডাউনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় রাজ্যে মিছিল-মিটিং হচ্ছে। মাস্ক পরিধানে তাঁদের অনীহা আছে।

স্কালডাখ বলেন, ‘লকডাউন লঙ্ঘন করা ওই সব মানুষের এখন উচিত হবে, সমাধিক্ষেত্রগুলোয় আমাদের কাজে সহায়তা করা।’

জার্মানির দক্ষিণ-পূর্বের সাক্সেন রাজ্যটির বিপুলসংখ্যক মানুষ কট্টরবাদী দক্ষিণপন্থী অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলের সমর্থক। তাঁরা চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সমালোচক হিসেবে পরিচিত।

ধারণা করা হয়,

সাক্সেন রাজ্যটিতে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ১০০ জন করোনায় মারা যাচ্ছেন।

জার্মানির চ্যান্সেলর ম্যার্কেল চলমান লকডাউনের মেয়াদ ও কড়াকড়ি আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরে লকডাউন মেনে চলতে অনুরোধ করেছেন।

জার্মানিতে করোনার টিকার প্রয়োগ বিলম্বে শুরু ও অপ্রতুলতার প্রসঙ্গে চ্যান্সেলর বলেছেন, তাঁরা শুধু জার্মানির কথা না ভেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের কথা ভেবে যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত সঠিক বলে তিনি মনে করছেন।

জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়ান স্পান জানিয়েছেন, তাঁরা আশা করছেন, এ বছর গ্রীষ্মকালের মধ্যে সব জার্মান নাগরিককে করোনার টিকা দেওয়া সম্ভব হবে।

জার্মানিতে এই মুহূর্তে লকডাউন ব্যবস্থায় খাদ্যপণ্যের সুপারমার্কেট, বই–পুস্তকের দোকান, ঔষধালয়, চিকিৎসকদের চেম্বার ছাড়া সবকিছু বন্ধ রয়েছে। জরুরি কাজ ছাড়া জনগণকে সব সময় ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জার্মানির বেশ কিছু অতি সংক্রমিত এলাকায় রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।

জার্মানির যেসব রাজ্যে করোনা সংক্রমণের হার কম, সেখানে ১৮ জানুয়ারি থেকে প্রাথমিক স্কুল খোলার কথা রয়েছে।

নতুন বিধির বিষয়ে জার্মানির একটি পত্রিকা জানিয়েছে, যেসব জেলায় প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে গড়ে ২০০ জন সংক্রমিত হয়েছে, সেখানকার জনসাধারণের নিজ নিজ এলাকা থেকে ১৫ বর্গকিলোমিটারের বাইরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।