জার্মানির চ্যান্সেলর প্রার্থীদের কাছে ভ্যাকসিন পেটেন্ট প্রত্যাহারের আবেদন
জার্মানির আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীদের কাছে কোভিড-১৯ টিকার ওপর আরোপিত বুদ্ধিবৃত্তিক স্বত্বাধিকার আইন সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন ১৪০ জনের বেশি সাবেক সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং নোবেল লরিয়েট।
বুধবার ইউনূস সেন্টারের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জার্মান চ্যান্সেলর পদে প্রতিযোগিতারত তিন প্রার্থী হলেন অ্যানালেনা বেরবক, ওলাফ শলজ ও আরমিন ল্যাসেটে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং নোবেল লরিয়েটরা ওই তিন চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীকে এ বিষয়ে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে কোভিড-১৯ টিকার বুদ্ধিবৃত্তিক স্বত্বাধিকার রদ ও টিকা প্রযুক্তি উন্মুক্ত করে দেওয়ার পক্ষে থাকার এবং যেকোনো ভবিষ্যৎ কোয়ালিশন সরকারের নীতি হিসেবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এ চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস, মালাওয়ির সাবেক প্রেসিডেন্ট জয়সে বান্ডা এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর জোসেফ স্টিগলিৎজ, প্রফেসর ফ্রাঁসোয়া বাররে সিনোসি, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও এলফ্রিডে জেলিনেক।
চিঠিতে তাঁরা বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের উৎপাদন ও বিতরণে কৃত্রিম বিধিনিষেধ প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে নিরর্থক মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন একসময় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি আইনের একটি সাময়িক রদ-এর বিষয়ে জার্মানির ক্রমাগত বিরোধিতায় তাঁরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
জার্মানি বরাবরই এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে এসেছে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার গত বছরের অক্টোবরে প্রথম উত্থাপিত এ প্রস্তাবে এ পর্যন্ত শতাধিক দেশ সমর্থন জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স এ বছরের শুরুতে তাদের সমর্থন ঘোষণা করে। জার্মানি রাজি হলেই প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়ে যাওয়ার পথে আর কোনো বাধা থাকবে না।
চিঠিতে বলা হয়, অতি উচ্চ আয়ের দেশসমূহের প্রায় ৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যেখানে পুরোপুরি ভ্যাকসিন সুরক্ষা পেয়েছেন, সেখানে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর ২ শতাংশের কম প্রাপ্তবয়স্করা টিকার আওতায় আসতে পেরেছেন।
এ চিঠিতে বিশেষভাবে বলা হয় যে গুটি কয়েক ওষুধ কোম্পানির একচেটিয়া কর্তৃত্বের অবসান ঘটানোর মাধ্যমে সব জাতির কাছে টিকা প্রযুক্তি উন্মুক্ত করে দিয়ে মহামারি অবসানে সাহায্য করার ক্ষমতা এখন একমাত্র জার্মানির হাতে।
এ বিষয়ে নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক বলেন, এ বিশেষ প্রেক্ষাপটে ‘ট্রিপস’ রদ-এ জার্মানির সমর্থন প্রাপ্য ভ্যাকসিন ও চিকিৎসায় সব মানুষের দ্রুত সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে—এ পরিষ্কার বার্তা পৌঁছে দেবে।
অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী প্রফেসর জোসেফ স্টিগলিৎজ বলেন, ‘এই ভয়াবহ মহামারি মোকাবিলা করতে জার্মানির নতুন চ্যান্সেলরের অসাধারণ ক্ষমতা থাকবে এবং তিনি লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষায় সহায়তার জন্য স্মরণীয় হয়ে বিশ্বনেতায় পরিণত হতে পারেন। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি আইনগুলো আজ সারা পৃথিবীতে জীবন রক্ষাকারী বিজ্ঞানের সুবিধা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে রেখেছে।’
জার্মানির চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীদের কাছে লেখা এ চিঠির উদ্যোক্তা পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (যা ক্লাব দ্য মাদ্রিদসহ বিশ্বের ৭০টি খ্যাতনামা সংগঠনের একটি কোয়ালিশন), ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস, অক্সফাম, ইউএন-এআইডিএস, নিজামী গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার, গ্লোবাল জাস্টিস নাউ, ইউনূস সেন্টার, আওয়াজ এবং প্রোগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনাল।
চিঠিতে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, টিকার উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান চরম অসমতা চলতেই থাকবে। যেখানে উচ্চ আয়ের দেশগুলো তাদের নাগরিকদের বুস্টার শট দিতে শুরু করেছে, সেখানে পৃথিবীর সব মানুষকে ভ্যাকসিন সুরক্ষার আওতায় আনতে টিকার জোগান এখনো প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।