জার্মানির নির্বাচন: ক্ষমতায় আসছে কারা

বাম থেকে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির ওলাফ শলৎস, পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টির আনালেনা বেরবক ও ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের আরমিন ল্যাশেট
ছবি: এএফপি

নির্বাচনের বাকি আর মাত্র চার দিন। নির্বাচনী প্রচারে শেষ মুহূর্তে জার্মানির প্রধান তিন রাজনৈতিক দল ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই প্রধান তিন দল হলো ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি।

চার দিন আগেও ভোটারদের প্রায় ৪০ শতাংশ এখনো জানেন না ২৬ সেপ্টেম্বর রোববার তাঁরা কোন দলকে ভোট দেবেন। খবরটি জানিয়েছে ফ্রাঙ্কফুর্টার অ্যালগেমাইনে পত্রিকা। আর এই না জানা বা ভাসমান ভোটারদের ভোটেই মূলত নির্ধারিত হবে আগামী চার বছরের জন্য ক্ষমতায় কোন দল জার্মানির ক্ষমতায় আসীন হবে।

জনসংখ্যায় ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম, আট কোটি মানুষের দেশ জার্মানিতে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ছয় কোটি। অর্থনীতিতে সবল আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে ইউরোপে সবার দৃষ্টি এখন জার্মানির নির্বাচনের দিকে। নির্বাচনে এবারও প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন ও সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি। বিগত আট বছর এই দুই দলই জোটবদ্ধভাবে সরকার পরিচালনা করলেও এখন তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। অবশ্য রাজ্যভিত্তিক দল, ব্যাভেরিয়া প্রদেশের ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যালিস্ট ইউনিয়ন বিগত সময়ে জোট সরকারের শরিক ছিল।

এই দলগুলোর বাইরে ছোট কোয়ালিশন সহযোগী দল হিসেবে রয়েছে পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি, লিবারেল বা ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টি, ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যালিস্ট ইউনিয়ন ও বাম দল। এই দলগুলো ছোট হলেও ক্ষমতার বলয়ে তারা সব সময় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।

১৬ বছর ধরে ক্ষমতাসীন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল নিজ দেশ ও ইউরোপে জনপ্রিয় রাজনীতিক। ইউরোপীয় ঐক্যসহ ইউরো মুদ্রার প্রসার ও বাজার ধরে রাখা, জলবায়ুর ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা, শরণার্থী বিষয়ে মানবিকতার অগ্রগণ্য নেত্রী হিসেবে তিনি পরিচিত। তবে তাঁর দল জার্মানির রক্ষণশীল, উচ্চবিত্ত, শিল্পপতিদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার দল হিসেবেই পরিচিতি। আগামী দিনে ম্যার্কেলবিহীন এই দল, ম্যার্কেল-রাজনীতিকে কতটা প্রাধান্য দেবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের পরিচয় প্রগতিশীল, বুদ্ধিজীবী, সাধারণ খেটে খাওয়া নাগরিকদের দল হিসেবে।

ইউরোপের বিভিন্ন বড় দেশ যখন রাষ্ট্রীয় বাজেট নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বতন প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন জার্মানিতে পুঁজির বিস্তার, রপ্তানি খাতে রেকর্ড পরিমাণ আয়, ক্রয়ক্ষমতাসহ প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে।

কিন্তু এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এই সবল অর্থনীতির সিংহভাগ সুফল পাচ্ছে দেশটির মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ। আর অন্যদিকে এই মুহূর্তে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ। করোনা মহামারির কারণে দেশটিতে নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। নানা ধরনের সরকারি প্রণোদনা দেওয়া সত্ত্বেও এই মুহূর্তে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

নানা জনমত জরিপে বলা হয়েছে, আগে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ২৬ শতাংশ, ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন ২২ শতাংশ, পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি ১৮ শতাংশ ভোট পাবে বলে বলা হয়েছে।

গত রোববার নির্বাচনের আগে শেষ টেলিভিশন বিতর্কে প্রধান তিন দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীরা অংশ নেন। সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির ওলাফ শলৎস, ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের আরমিন ল্যাশেট ও পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টির আনালেনা বেরবক। বিতর্কটিতে বর্তমান সামাজিক সমস্যাগুলো, যেমন ন্যূনতম মজুরি, শিশু ভাতা ও মৌলিক শিশু নিরাপত্তা, সামাজিক ভাতার ওপর নির্ভরশীল দরিদ্র পরিবার, অবসর ভাতা ইত্যাদি বিষয় বেশি করে সামনে আসে। এই বিতর্কের মধ্যেই সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির ওলাফ শলৎস আভাস দিয়েছেন, আগামী দিনে বিজয়ী হলে তাঁর দল গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট সরকার গঠন করবে।

মোট ৭০৯টি আসনের মধ্য ২৯৯টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে। অন্য আসনগুলো দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী মীমাংসিত হবে। ভোটাররা দুটি করে ভোট দেবেন। একটি ভোট সরাসরি প্রার্থী নির্বাচনের, অপরটি পছন্দের দলকে। নিয়ম অনুযায়ী, দলগুলো তাদের ভোটপ্রাপ্তির সংখ্যাতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেও মনোনীত প্রার্থীদের পার্লামেন্টে পাঠাতে পারবে। কোনো দল ৫ শতাংশের কম ভোট পেলে পার্লামেন্টে যাওয়ার গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।

আগামী রোববার জার্মান পার্লামেন্টের ২০তম নির্বাচন। সারা দেশের প্রায় ছয় কোটি ভোটারের কাছে নির্বাচনকেন্দ্র নিয়ে যাওয়ার জন্য নাম ও নম্বরসংবলিত কার্ড ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে। যেখানে ভোটকেন্দ্রের কথাও উল্লেখ আছে। করোনার কারণে এবার রেকর্ডসংখ্যক ভোটার ডাকযোগে ভোট দিচ্ছেন।

এবারের নির্বাচনে ৪৭টি দল ৬ হাজার ২১১ জন প্রার্থী দিয়েছে। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ছয় হাজার। রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভোটকেন্দ্রগুলো খোলা থাকবে সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। আর ভোটের ফলাফল দুই ঘণ্টা পর রাত আটটার মধ্যেই প্রকাশ হয়ে যাওয়ার কথা।