জার্মানির লকডাউন নিয়ে হতাশা বিশেষজ্ঞদের

জার্মানিতে চলমান লকডাউনে স্থবির হ্যানোভার শহর
ছবি: সরাফ আহমেদ

জার্মানিতে কঠোর লকডাউন দিয়েও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমানো যাচ্ছে না। সে জন্য জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও রাজ্যগুলোর প্রধানেরা লকডাউন বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের কারণ জানতে জার্মানিসহ ইউরোপের ১৩ জন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় আলোচনায় বসেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও রাজ্যপ্রধানেরা। জার্মানির ডের স্পিগেল পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সব বিশেষজ্ঞই জার্মানির চলমান লকডাউন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, করোনাভাইরাসে যুক্তরাজ্যের নাজেহাল দশা থেকে জার্মানির শিক্ষা নেওয়া উচিত। ক্রিসমাস ও নববর্ষের ছুটির সময় লকডাউন থাকলেও অনেকেই তা আমলে না নেওয়ার কারণে এই সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডের স্পিগেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানিতে কঠোর লকডাউন সত্ত্বেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু হার না কমায় জার্মান সরকার আজ মঙ্গলবার বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংক্রমণ সর্বনিম্ন রাখার কৌশল হিসাবে নতুন সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তী তিন সপ্তাহের জন্য কার্যকর থাকবে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাধারণ মাস্কের বদলে প্রকাশ্যে এফএফপিটু মাস্ক রাস্তাঘাট বা গণপরিবহন বাস, ট্রাম, ট্রেন ও দোকানপাটে সবাইকে পরতে হবে। গণপরিবহনগুলো ধারণক্ষমতার চেয়ে কম যাত্রী বহন করবে। যতটা সম্ভব ‘হোম অফিস’ করতে হবে। বিদ্যালয় আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। যেসব অঞ্চলে সংক্রমণের সংখ্যা প্রতি লাখে ২০০–এর বেশি, সেসব অঞ্চলের মানুষ তাঁদের বাসা থেকে ১৫ বর্গকিলোমিটারের বাইরে যেতে পারবেন না। সবখানে নাগরিকদের যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। নিজ পরিবারের বাইরে প্রয়োজনে কেবল একজন অতিথির সঙ্গে দেখা করা যাবে। তবে পুরো জার্মানিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধের বিষয়ে ও রাত্রিকালীন কারফিউ জারির বিষয়ে রাজ্যগুলোর মধ্যে এখনো দ্বিমত রয়েছে।

জার্মানির সংক্রমণ রোগবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র, রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের পরিচালক লোথার ভিলার জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের গবেষণা নিবন্ধের বরাত দিয়ে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি সামান্য উন্নতির দিকে। তবে এটি পরিষ্কার যে এখনো সংক্রমণের সংখ্যা ততটা কমানো সম্ভব হয়নি।

জার্মানিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথমে গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এরপর এর মেয়াদ দুই দফা বাড়িয়ে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়।

রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, গতকাল মঙ্গলবার থেকে আজ বুধবার ২৪ ঘণ্টায় প্রায় হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ১ হাজার ১৪৮ জন। এ নিয়ে জার্মানিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৮ হাজার ছাড়িয়েছে।