জি–৭ সম্মেলনে চীনের পাল্টা নতুন আর্থিক পরিকল্পনা

জি ৭ ভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলনে নেতারা।ছবি: রয়টার্স

নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোয় উন্নত অবকাঠামো গড়ে তুলতে নতুন পরিকল্পনা করেছেন জি–৭–ভুক্ত দেশের নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ডের (বিথ্রিডব্লিউ) পরিকল্পনা করেছেন। এটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) পাল্টা পরিকল্পনা। বাইডেন বলেন, গুণগত দিক দিয়ে এটি আরও উন্নত মানের। খবর বিবিসি ও এএফপির।

চীনের বিআরআই পরিকল্পনায় বিভিন্ন দেশের রেল, সড়ক ও বন্দরের যোগাযোগব্যবস্থায় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে বিআরআই নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে।

ইংলিশ কাউন্টি অব কর্নওয়ালের করবিস বের সমুদ্র–উপকূলীয় রিসোর্টে জি–৭–ভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলন চলছে। জি–৭–ভুক্ত দেশের নেতারা বলেছেন, তাঁরা পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও মূল্যবোধ বজায় রাখতে চান।

সম্মেলনে বরিস জনসন।
ছবি: রয়টার্স

তবে চীনের বিআরআইয়ের বিকল্প পরিকল্পনায় কীভাবে অর্থ সংস্থান করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, এ ধরনের উদ্যোগের জন্য অর্থ সংস্থান করার মতো অবস্থায় জি–৭–ভুক্ত দেশের নেতারা নেই।

ভবিষ্যৎ মহামারি রোধে নতুন পরিকল্পনা নিয়েও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন জি–৭–ভুক্ত দেশের নেতারা। ১০০ দিনের মধ্যে করোনা চিকিৎসা, টিকার উন্নয়ন ও লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সময় আজ রোববার সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণায় এ পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।

করবিস বের সমুদ্র–উপকূলীয় রিসোর্টে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও কানাডা সমন্বিতভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীনে। এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দ করা। এ ছাড়া উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে জিনজিয়ানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে জি-৭ সম্মেলন শুরু হয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ছাড়াও এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ দুই নেতাও এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেবেন ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা।

যুক্তরাষ্ট্রবাসী গতকাল শনিবারের জি-৭ সম্মেলনের অধিবেশনকে বিশ্বজুড়ে চীনের প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর বিষয় হিসেবে দেখেছেন। শুক্রবারের আলোচনা শেষে নেতারা ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আমন্ত্রণে নৈশভোজে অংশ নেন।

কয়েক বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতি ও সামরিক খাত উভয় ক্ষেত্রেই চীন অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলছে। সম্মেলনে নেতারা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আগ্রাসী মনোভাবের সুসংহত জবাব দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর লাখো কোটি ডলারের অবকাঠামো প্রকল্প বিআরআই ঘোষণা করেন। এটি একটি উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ উদ্যোগ, যেটা এশিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপ ছাড়িয়ে আরও বহুদূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে চায় চীন।

এ প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তান, ইরানসহ নানা দেশের রেলপথ, বন্দর, মহাসড়ক এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজে সহায়তা করছে চীন। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট সির বিআরআই প্রকল্প চীনের সেই প্রাচীন ‘সিল্ক রোড’ বাণিজ্যপথ প্রকল্পেরই আধুনিক সংস্করণ, যার মাধ্যমে চীন এশিয়া, ইউরোপ এবং আরও বহুদূরকে সংযুক্ত করে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে পারে তার আধিপত্য।