তিনি রাঁধেন, কিন্তু খেতে পারেন না

লোরেটা হার্মেস
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

লোরেটা হার্মেস একজন রন্ধনশিল্পী। হরেক রকম খাবার বানানোই তাঁর নেশা। একই সঙ্গে পেশাও। নানা উপকরণ মিশিয়ে দারুণ সব নতুন নতুন সুস্বাদু খাবার বানান লোরেটা। তবে নিজের রেসিপির মজাদার খাবারগুলো খেতে পারেন না লোরেটা। ছয় বছর আগে লোরেটা শেষ যে শক্ত খাবারটি খেয়েছিলেন, সেটি ছিল আলুভাজা।

লোরেটা ভুগছেন হাইপারমবিল এহলারস ড্যানলস সিন্ড্রোম (এইচইডিএস) রোগে। এটি জিনগত অসুস্থতা। এতে শরীরের সংযোগকারী টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে লোরেটার ভুল চিকিৎসা হয়েছিল। এতে তাঁর পাকস্থলী আংশিক বিকল হয়ে যায়। ফলে তরল খাবার খেয়েই বাঁচতে হয় লোরেটাকে।

শারীরিক এই অসুস্থতার কারণে অবশ্য থেমে যাননি লোরেটা। নিজের রেসিপির করা রান্না চেখে দেখতে পারেন না। তাতে কী। লোরেটা রান্না করেন। তাঁর রান্নার ছবি দেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে। সেখানে লোরেটার ফলোয়ারও অনেক। দিনে দিনে সেটা বাড়ছেও।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, নিজের জীবনের লড়াইয়ের গল্প বিবিসিকে বলেছেন লোরেটা। বিবিসিতে প্রকাশের পর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লোরেটা বলেন, ‘এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমার গল্প পুরো বিশ্ব জানে। সবাই যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তাতে আমার মন ভরে গেছে।’

নিজের অসুস্থতা আর শারীরিক কষ্টের কথা জানিয়েছেন লোরেটা। তিনি বলেন, শক্ত খাবার খাওয়ার পর তাঁর পাকস্থলীতে তীব্র ব্যথা হতো। ২০১৫ সাল থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে তরল খাবারের ওপর নির্ভরশীল লোরেটা। এভাবেই তিনি সুস্থ থাকতে পারেন।

লন্ডনের সেন্ট মার্কস হাসপাতালে বেশ কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর এইচইডিএস রোগ ধরা পড়ে লোরেটার। এ রোগে ১৩ ধরনের জটিলতা থাকে। এতে লোরেটার সংযোগকারী টিস্যু ও অন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোগটা শনাক্ত হতে বেশ দেরি হয়ে যায়। এর আগে কয়েক বছর বেশ ভুগতে হয় লোরেটাকে।

১৫ বছর বয়সে খাদ্যভীতিতে ভোগেন লোরেটা। এক বছর পর্যন্ত এই রোগ ছিল তাঁর। এরপরও হজমের সমস্যা ছিল। ১৯ বছর বয়সে কলেজ শুরুর পর থেকে লোরেটার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তিনি বলেন, পরিস্থিতি খুব দ্রুত খারাপ হচ্ছিল। তিনি খেতে পারতেন না। শৌচাগারেও যেতে পারতেন না। এরপর পাঁচ বছর ভয়ংকর জীবন কেটেছে লোরেটার।

লোরেটার ওজন কমে যায় ২৫ কেজি। সে সময় একজন চিকিৎসক লোরেটাকে জানান, তিনি খাবার নিয়ে মানসিক অসুস্থতা বা খাদ্যভীতিতে ভুগছেন। সে সময় তাঁকে মানসিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাতে খুব বেশি লাভ হয়নি। মানসিক চিকিৎসার অংশ হিসেবে প্রত্যেক রোগীকে দিনে ছয়বার জোর করে খেতে বাধ্য করা হতো। খাওয়ার পরই লোরেটার তীব্র ব্যথা হতো। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা লোরেটাকে দ্রুত খাবার শেষ করার জন্য চাপ দিতেন।

এভাবে পার হয়ে যায় বেশ কয়েক বছর। একপর্যায়ে প্রথমবারের মতো লোরেটার এইচইডিএস রোগ ধরা পড়ে। লোরেটাকে এখন বিশেষ পদ্ধতিতে খাবার খাওয়ানো হয়। ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লোরেটা বলেন, বিশেষ পদ্ধতিতে খাওয়ার কারণে তরল খাবার তাঁর পরিপাকতন্ত্রে না গিয়ে রক্তপ্রবাহের সঙ্গে মিশে যায়। লোরেটার বুকে একটি হিকম্যান লাইন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সেটি তাঁর হৃৎপিণ্ডের ধমনি পর্যন্ত চলে যায়।

এভাবেই তরল খাবার যায় লোরেটার শরীরে। এ পদ্ধতিতে খাওয়ার পর লোরেটা এখন অনেকটাই ভালো আছেন। তাঁর ওজনও কিছুটা বেড়েছে। তবে নিজের বানানো মজাদার খাবারগুলো খেতে না পারার আক্ষেপ লোরেটার রয়েই গেছে।