তুরস্ককে নিষেধাজ্ঞার হুমকি ইইউর

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান
ছবি: এএফপি

তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

জ্বালানিসম্পদ ও সমুদ্রসীমা নিয়ে গ্রিসের সঙ্গে বিরোধের জেরে ক্রমবর্ধমান উসকানি ও চাপ প্রয়োগের প্রতিক্রিয়ায় তুরস্কের ওপর এই নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয় ইইউ।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন আঙ্কারাকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে একতরফা তৎপরতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রাসেলসে আজ সকালে ইইউ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।

অঞ্চলটিতে সংঘাতের ঝুঁকি হ্রাস চেষ্টার অংশ হিসেবে তুরস্ক ও গ্রিস একটি সামরিক হটলাইন স্থাপন করেছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে তুরস্ক সম্ভাব্য তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিতর্কিত একটি এলাকায় জাহাজ পাঠালে উত্তেজনা বেড়ে যায়।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা সাংবাদিকদের বলেছেন, তুরস্কের সঙ্গে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায় ইইউ। আর তা আঙ্কারার স্বার্থেও অনেক বেশি প্রয়োজন। এটা কেবল উসকানি ও চাপ বন্ধ হলেই সম্ভব। তাঁরা আশা করছেন, তুরস্ক একতরফা তৎপরতা থেকে নিবৃত্ত থাকবে। এ ধরনের কোনো কার্যক্রম চালানো হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ইইউ নেতাদের বৈঠকের পর সদস্য দেশগুলো ডিসেম্বর নাগাদ তুরস্কের আচরণ পর্যালোচনা করতে সম্মত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যদি উসকানি বন্ধ না হয়, তাহলে তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে ইইউ।

বৈঠকের পর অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কার্জ এক টুইটে লিখেছেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন অব্যাহত থাকোয় তুরস্কের বিরুদ্ধে ইইউ স্পষ্ট হুমকি দিয়েছে।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেছেন, ইইউয়ের পক্ষ থেকে তুরস্ককে বাণিজ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভূমধ্যসাগরে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরেই ইইউর সদস্যপ্রার্থী। তবে এই প্রচেষ্টা এখন থমকে আছে।

ইইউ নেতারা তুরস্কের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও আইনের শাসনের সমালোচনা করে আসছেন।

ইইউ ও তুরস্কের মধ্যকার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। তবে ইইউর জন্য তুরস্ক এক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। লাখো অভিবাসীকে আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক। এ ছাড়া গ্রিসে অভিবাসীর গমন সীমিত করতে তুরস্কের সঙ্গে ইইউ চুক্তিও করেছে।

গ্রিস ও তুরস্ক দুটি দেশই সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য। তবে দুটি দেশের মধ্যে সীমান্ত ও সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে।

গত আগস্ট মাসে আঙ্কারার পক্ষ থেকে গ্রিক আইল্যান্ডের দক্ষিণের একটি এলাকায় গবেষণা জাহাজ পাঠানো হয়। এতে গ্রিস ক্ষুব্ধ হয়। ওই এলাকাটি গ্রিস, তুরস্ক ও সাইপ্রাস নিজেদের বলে দাবি করে আসছে।

গ্রিসের পক্ষ থেকে তুরস্কের গবেষণা কার্যক্রমকে মারাত্মক উসকানি হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই সংকটে ইইউ সাইপ্রাস ও গ্রিসের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

গত মাসে অবশ্য ওই গবেষণা জাহাজ তুরস্কের জলসীমায় ফিরে এলে উত্তেজনা কমে আসে। দুই দেশ ওই সময় আলোচনায় বসতে সম্মত হয়। ন্যাটোর প্রধান কার্যালয় ব্রাসেলসে তুরস্ক ও গ্রিস আলোচনায় বসে। ন্যাটোর মহাসচিব দুই দেশের আলোচনার বিষয়টিকে স্বাগত জানান।