দুই মাসে দ্বিগুণ হয়েছে রোগী

১১ এপ্রিল থেকে পূর্ববর্তী সাত দিনে আগের সপ্তাহের তুলনায় বৈশ্বিক সংক্রমণের সংখ্যা ১১ শতাংশ বেড়েছে।

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে বিশ্বজুড়ে টিকাদান চলছে। গত ৮ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের এক নারীকে টিকাদানের মাধ্যমে শুরু হয় এই কার্যক্রম। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই চলছে টিকাদান। কিন্তু এরপরও সংক্রমণের গতি রোধ করা যাচ্ছে না। বিশ্বজুড়েই সংক্রমণ ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই মাসে করোনা রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, গত দুই মাসে সংক্রমণ বাড়ার কথা জানিয়ে গেব্রেয়াসুস বলেছেন, ‘মহামারির শুরু পর থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের দেখা সর্বোচ্চ সংক্রমণ এটি। আগে কিছু দেশ উচ্চমাত্রার সংক্রমণ ঠেকাতে পেরেছিল। এখন সেই সব দেশে সংক্রমণ ব্যাপকহারে বেড়েছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ১১ এপ্রিল থেকে পূর্ববর্তী সাত দিনে আগের সপ্তাহের তুলনায় বৈশ্বিক সংক্রমণের সংখ্যা ১১ শতাংশ বেড়েছে। এই সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে একটি কারণ হিসেবে করোনার নতুন ধরনকে দায়ী করা হচ্ছে। সংক্রমণ বাড়ার অন্য কারণগুলোর মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে মানুষের মধ্যে অনীহার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।

বিশ্বের করোনার পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখে ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস। এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে গতকাল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ছিল ১৪ কোটি ১৫ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৭ জন। মৃত্যু ৩০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৮ জন। তবে ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ১২ কোটি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৩৯ জন। করোনা সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত ৫ লাখ ৮০ হাজার ৭৯৩ জনের প্রাণ নিয়েছে এই মহামারি। এ ছাড়া করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৬৪ হাজার ৫০৯ জনের।

যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ভারত। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। গত শনিবার ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে রোগী শনাক্ত করা হয়েছে ২ লাখ সাড়ে ৬১ হাজার যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। মারা গেছেন ১ দেড় হাজারের বেশি। এ নিয়ে দেশটিতে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৪ জন। মৃত্যু ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫২৩ জন।

ভারতে সংক্রমণ বাড়ার কারণ হিসেবে দেশটির সরকারের অনীহার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির মধ্যেও দেশটিতে নির্বাচন হচ্ছে, কুম্ভমেলার মতো বড় ধর্মীয় উৎসবও চলছে, বড় পরিসরের খেলাধুলার টুর্নামেন্টও আয়োজন করা হয়েছে। তবে করোনার সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করা ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ ঠেকাতে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া দিল্লি, মধ্যপ্রদেশসহ কয়েকটি অঞ্চলে জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

ভারতের কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার বলেছেন, প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঢল নেমেছে। এসব রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে। এ অবস্থায় হোটেল ও ব্যাঙ্কুয়েট হলগুলোকে অস্থায়ী হাসপাতাল বানানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে সংক্রমণ ঠেকাতে ভারত বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা বললেও টিকা সরবরাহে সংকট দেখা দেওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ভারত ছাড়াও লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড, তুরস্ক ও অন্যান্য কিছু দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণে ভারতের পরেই রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মোট আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ৩৯ লাখের বেশি। সুস্থ হয়ে উঠেছে ১ কোটি ২২ লাখ ৯৯ হাজারের বেশি। দেশটিতে রোগী চাপে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। গুরুতর রোগীরা যাতে জরুরি ভিত্তিতে নিবিড় চিকিৎসাসেবা পান, তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। করোনা সংকট এতটাই প্রকট যে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস এই পরিস্থিতিকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে ঘোষণা দিয়েছে।

তুরস্ক ও পোল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে আগে ততটা সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। এখন দেশগুলোতে বাড়ছে সংক্রমণ। ইরানেও নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে।