নতুন জোট সরকার গঠনে ভবিষ্যৎ রূপরেখা চূড়ান্ত

সরকারের ভবিষ্যৎ রুপরেখা নিয়ে বৈঠকের পরে ওলাফ শলৎসসহ অন্যান্য দলের নেতারা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

জার্মানিতে নির্বাচনের দুই মাস পর আসন্ন নতুন জোট সরকার তাদের ভবিষ্যৎ রূপরেখা প্রণয়ন করেছে। নতুন জোট সরকার আগামী ডিসেম্বর মাসে বড়দিনের আগেই বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামাজিক গণতান্ত্রিক দল থেকে চতুর্থ একজন নেতা দেশটির চ্যান্সেলর হতে যাচ্ছেন।

জার্মানিতে জোট বেঁধে সরকার গঠনের দীর্ঘ রেওয়াজ রইলেও এই প্রথম সামাজিক গণতান্ত্রিক দল, পরিবেশবাদী সবুজ দল এবং লিবারেল গণতান্ত্রিক দল একসঙ্গে জোট বেঁধেছে। এই জোটকে ‘ট্রাফিক লাইট’ জোট বলে অভিহিত করা হচ্ছে। জার্মানিতে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন রঙের প্রতীক রয়েছে। জোটবদ্ধ এই তিন দলের প্রতীক হলো লাল, সবুজ ও হলুদ।

বার্লিনে স্থানীয় সময় বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন জোট সরকারের নেতারা আগামী সরকারের রূপরেখার ঘোষণা দেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানির ২০তম নির্বাচনের পর দীর্ঘ দুই মাস আলোচনা-পরবর্তী এই তিন দল জোটবদ্ধভাবে আগামী চার বছর সরকার চালাতে একমত হয়েছে। আসন্ন নতুন জোট সরকারভুক্ত তিনটি দলই এখন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দলীয় সম্মেলন করে দলের সদস্যদের সম্মতি নেওয়ার পর সরকার গঠিত হবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগেই এই জোটবদ্ধ সরকার শপথ নেবে এবং ক্ষমতাই আসীন হবে।

নতুন জোট তাদের রূপরেখায় জার্মানিতে জলবায়ু সুরক্ষা, ডিজিটালাইজেশন, সমাজের সংস্কার, অর্থনৈতিক ও আধুনিকীকরণে বিষয়ে বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে একটি কাজকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, আর তা হলো করোনা মহামারির বিস্তৃতি ঠেকানো ও উদ্ভূত সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের বিষয়টি।

জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর হতে চলেছেন সামাজিক গণতন্ত্রী দলের নেতা ওলাফ শলৎস। ৬২ বছর বয়স্ক ওলাফ শলৎস, বর্তমানে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের অর্থমন্ত্রী। একসময় তিনি বন্দরশহর হামবুর্গের মেয়র ছিলেন। ২০০২ সালে সাবেক চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডারের সময় তিনি সামাজিক গণতন্ত্রী দলটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি এর আগে ম্যার্কেলের জোট সরকারে জার্মানির শ্রম ও সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সাল থকে তিনি জোট সরকারের অর্থমন্ত্রী ও সহকারী চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করছেন।

আসন্ন জোট সরকারের নতুন একটি চমক হচ্ছে, এই প্রথম একজন নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ। জার্মানির পরিবেশবাদী সবুজ দলের সভানেত্রী ৪০ বছর বয়স্ক অ্যানালেনা বেয়ারবককে এই পদে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। হ্যানোভারে জন্মগ্রহণকারী অ্যানালেনা রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং পাবলিক ল বিষয়ে অধ্যয়ন করেন হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৩ সাল থেকে তিনি জার্মান পার্লামেন্টে সবুজ দলের সাংসদ। লিবারেল গণতান্ত্রিক দলের প্রধান ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনার পেয়েছেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব।

নতুন জোট সরকারের রূপরেখায় নাগরিক সুবিধাসমূহে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ন্যূনতম মজুরি, পেনশন বৃদ্ধি এবং নাগরিক সুবিধা, শিশু ও তরুণদের অধিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীদের গর্ভপাতবিষয়ক বৈষম্যমূলক আইন বাতিল, অভিবাসীদের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব আইন আরও সহজ করবার কথা বলা হয়েছে। হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম ও কিন্ডারগার্টেনে চাকরিজীবীদের নতুন পে স্কেলের কথা বলা হয়েছে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগে জনসাধারণকে উৎসাহী করতে সহজ নিয়ম করার কথা বলা হয়েছে। জার্মানিতে এই মুহূর্তে তীব্র গৃহসংকটের মুখে প্রতিবছর চার লাখ গৃহ নির্মাণের পরিকল্পনা ও গৃহনির্মাণে সরকারি ভর্তুকি ও আর্থিক সহায়তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জলবায়ু সুরক্ষার ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবেশদূষণকারী যেকোনো পরিকল্পনা বাতিল করা হবে। পরিবেশ ও জলবায়ু বান্ধব প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

আসন্ন ক্ষমতাসীন জোটের তিনটি দল ১৬টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিয়েছে। সামাজিক গণতান্ত্রিক দল ৭টি, পরিবেশবাদী সবুজ দল ৫টি এবং লিবারেল গণতান্ত্রিক দল ৪টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে।