নাগরনো-কারাবাখে শান্তিরক্ষী মোতায়েন করল রাশিয়া

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ছবি: রয়টার্স

যুদ্ধবিধ্বস্ত বিতর্কিত নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করেছে রাশিয়া। আজ মঙ্গলবার সকালে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে সেখানে সেনা মোতায়েন করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এ পদক্ষেপ সংঘর্ষ থামিয়ে দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সমঝোতার পথ সুগম করতে পারে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্লাদিমির পুতিন নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলে পুরোপুরি সংঘর্ষ থামাতে একটি চুক্তি নিয়ে কথা বলেছেন। এ চুক্তিতে রাশিয়া, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান—তিন পক্ষই সম্মত হয়েছে। এ চুক্তি মোতাবেক আজ মধ্যরাত থেকে সেখানে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি বজায় থাকবে। ওই অঞ্চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে হাজারো মানুষ মারা গেছে এবং অনেকেই বাস্তুহারা হয়েছে। বিস্তৃত অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, নাগরনো-কারাবাখ দখলে নিতে ছয় সপ্তাহ ধরে আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে আজারবাইজানের সেনাবাহিনী লড়াই করছে। দুই দেশের সীমান্তে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলি চলে আসছে। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় মাঝে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী এ লড়াইয়ে বেসামরিক নাগরিকসহ বহু প্রাণহানি ঘটেছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, দুই দেশের সংঘাতের মূলে ওই নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল। এলাকাটি জাতিগত আর্মেনীয় অধ্যুষিত। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় ভোটাভুটিতে অঞ্চলটি আর্মেনিয়ার সঙ্গে থাকার পক্ষে রায় দেয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। ১৯৯০ সালের ওই যুদ্ধে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সেই যুদ্ধ থামে ১৯৯৪ সালের এক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।

এরপর থেকে এলাকাটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে। তাদের সমর্থনে আর্মেনিয়ার সরকার। আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যস্থতায় দশকের পর দশক আলোচনা হলেও শান্তিচুক্তি অধরা থেকে গেছে।

ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, আজারবাইজান তাদের অধিকৃত সমস্ত অঞ্চল পাবে, যার মধ্যে নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর শুশাও পড়বে। আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্যান্য অঞ্চলের কিছুটা ছেড়ে দিতে হবে। রাশিয়ার শান্তিরক্ষী বাহিনী ওই অঞ্চলে পাঁচ বছর অবস্থান করবে। পুতিন বলেছেন, শান্তিরক্ষী বাহিনী নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলের সামনে সারিতে থাকবে। এই দুই অঞ্চলের মধ্যে করিডর স্থাপন করা হবে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে ১ হাজার ৯৬০ জন সেনাকে ওই অঞ্চলে মোতায়েন শুরু করেছে।

ওই অঞ্চলে আজারবাইজানদের সমর্থন দেওয়া তুরস্কের ভূমিকার ব্যাপারে এখনো কিছু জানা যায়নি।

পুতিন বলেছেন, বাস্তুহারা লোকজন এখন ওই এলাকায় ফিরতে পারবেন। যুদ্ধবন্দী ও নিহত ব্যক্তিদের লাশ বিনিময় করা যাবে। সব অর্থনৈতিক ও পরিবহন যোগাযোগ চালু হবে। এতে সাহায্য করবে রাশিয়ান সীমান্তরক্ষীরা।

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেন, শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টায় তুরস্ক যুক্ত থাকবে। তবে আঙ্কারা এখনো কিছু জানায়নি। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশনিয়ান পরিস্থিতি মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন।