নাভালনিকে কারা হাসপাতালে স্থানান্তর

রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে অবশেষে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার তাঁকে একটি কারা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কারাবন্দী নাভালনির স্বাস্থ্য নিয়ে দেশ-বিদেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আন্তর্জাতিক হুঁশিয়ারির পর তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলো।

রাশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এই তথ্য জানিয়েছে। ৪৪ বছর বয়সী নাভালনি রাশিয়ার সুপরিচিত বিরোধী নেতা। তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক।

নাভালনি গত ৩১ মার্চ থেকে কারাগারে অনশন শুরু করেন। পিঠে তীব্র ব্যথা ও পায়ের অসাড়তার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে তিনি অনশনে যান। নাভালনির পরিবার, চিকিৎসক, আইনজীবী ও সহযোগীরা কিছুদিন ধরে বলে আসছিলেন যে তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো নয়। তাঁর অবস্থা এমন যে তিনি কয়েক দিনের মধ্যে মারা যেতে পারেন। নাভালনির কিছু হলে তার জন্য মস্কো দায়ী থাকবে বলে সতর্ক করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এমন প্রেক্ষাপটে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলো।

নাভালনিকে হাসপাতালে স্থানান্তর নিয়ে রাশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষ গতকাল একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, চিকিৎসকদের একটি কমিটি নাভালনিকে হাসপাতালে স্থানান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এই বিশেষায়িত হাসপাতালটি ভ্লাদিমির অঞ্চলের আরেকটি কারাগারে অবস্থিত।

রাশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নাভালনির বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়েছে। মূল্যায়নের ফল সন্তোষজনক। একজন চিকিৎসক প্রতিদিন নাভালনিকে পরীক্ষা করছেন। নাভালনির সম্মতির ভিত্তিতে তাঁকে ভিটামিন থেরাপির পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।

তবে নাভালনিকে ঠিক কী চিকিৎসাপত্র দেওয়া হয়েছে, চিকিৎসাপত্রে তাঁর সম্মতি আছে কি না, সে সম্পর্কে এই বিরোধী নেতার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বা প্রতিনিধিরা কিছুই জানেন না।

নাভালনির সমর্থকেরা বলছেন, তাঁর অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছে গোপন করছে। একই সঙ্গে তাঁরা বলছে, যে কারা হাসপাতালে নাভালনিকে স্থানান্তর করা হয়েছে, সেটি গুরুতর অসুস্থ যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসার বিশেষায়িত হাসপাতাল।

নাভালনির শীর্ষস্থানীয় সহযোগীরা তাঁর সমর্থনে আগামীকাল বুধবার রাশিয়ায় বড় ধরনের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। আগের মতোই এই বিক্ষোভ ঘিরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে বুধবার বিক্ষোভের ডাক দিয়ে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। এই ভিডিও সরিয়ে নিতে ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়ার ইন্টারনেট নজরদারি সংস্থা। তবে গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত ভিডিওটি সরায়নি ইউটিউব।

নাভালনির শীর্ষ সহযোগী ভ্লাদিমির মিলভ গতকাল জানিয়েছেন, বুধবারের বিক্ষোভ সামনে রেখে তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কায় রাশিয়া থেকে পালিয়ে ইউরোপে গেছেন।

অন্যদিকে মস্কোয় আগামী সপ্তাহে একটি মামলার শুনানি হতে যাচ্ছে। এই মামলায় নাভালনির সংগঠনকে ‘চরমপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করার আরজি জানিয়েছেন সরকারি কৌঁসুলিরা।

নাভালনিকে গত বছরের আগস্টে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সে সময় তিনি সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে উড়োজাহাজে করে মস্কোয় ফিরছিলেন। যাত্রাপথে উড়োজাহাজেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজ সাইবেরিয়ার ওমস্কে জরুরি অবতরণ করে। সেখানকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। তিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য জার্মানির বার্লিনে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন।

বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে গত সেপ্টেম্বরে জার্মানি জানায়, নাভালনিকে রাশিয়ান নার্ভ এজেন্ট ‘নোভিচক’ প্রয়োগ করা হয়েছিল। পরে অন্য দেশের বিশেষজ্ঞরাও একই কথা বলেন। বিষ প্রয়োগের জন্য সরাসরি পুতিনকে দায়ী করেন নাভালনি। তবে পুতিন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বানে ক্রেমলিন কর্ণপাত করেনি।

ক্রেমলিনের হুমকি উপেক্ষা করে গত ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন নাভালনি। বিমানবন্দরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অর্থ আত্মসাতের পুরোনো একটি মামলায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে নাভালনিকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই দণ্ডকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন নাভালনি।