নাভালনিকে গ্রেপ্তারের পর ৩০ দিনের আটকাদেশ

শুনানি শেষে নাভালনিকে ঘিরে রাখে পুলিশ
ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার প্রধান বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে গ্রেপ্তারের পর ৩০ দিনের আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ স্টেশনের মধ্যে আদালত বসিয়ে তাঁকে এই আটকাদেশ দেওয়া হয়। তিনি এ আদালতকে ‘উপহাস’ বলে অভিহিত করেন এবং সমর্থকদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভের ডাক দেন বলে বিবিসির খবরে বলা হয়।

গতকাল রোববার ৪৪ বছর বয়সী নাভালনি উড়োজাহাজে করে জার্মানির বার্লিন থেকে রাশিয়ার মস্কোয় পা রাখামাত্র আটক হন। ২০১৪ সালের একটি অর্থ আত্মসাৎ মামলায় স্থগিত দণ্ডের প্যারোলের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে নাভালনিকে আটক করা হয়। তবে নাভালনি এ অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন।

বার্লিন থেকে নাভালনিকে বহনকারী উড়োজাহাজটির গতকাল মস্কোর আরেকটি বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিল। নাভালনিকে দেখতে সেখানে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে বহনকারী ফ্লাইটটি শেষ পর্যন্ত সেখানে অবতরণ না করে মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে নামার পর নাভালনিকে আটক করে রুশ পুলিশ।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে নাভালনি পরিচিত। রাশিয়ায় তাঁকে আটক করার খবরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাঁর দ্রুত মুক্তি দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একাধিক দেশ।

শুনানির অপেক্ষায় থাকার সময় সমর্থকদের উদ্দেশে ভিডও বার্তা দেন নাভালনি
ছবি: রয়টার্স

মস্কোর উপকণ্ঠে খিমকিতে পুলিশ স্টেশনে রাতভর আটকে রাখা হয় নাভালনিকে। পরে সোমবার সেখানে আদালত কক্ষ তৈরি করে বিচার বসে। বিচারক প্যারোলের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে নাভালনিকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আটক রাখার আদেশ দেন। ২৯ জানুয়ারিতে আরেকটি শুনানিতে হাজির হতে হবে নাভালনিকে। তাঁর সাড়ে তিন বছরের স্থগিত দণ্ড আবার কার্যকর করা হবে কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ওই শুনানিতে।

নাভালনি সোমবার বলেছেন, তাঁর সঙ্গে যা করা হচ্ছে, তা হলো ‘বিচারের নামে উপহাস’ এবং শুনানিকে ‘চরম অনাচার’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি পুলিশ স্টেশন থেকে তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘ভয় পাবেন না। রাস্তায় নেমে আসুন, আমার জন্য নয়, নিজেদের জন্য, নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য।’

এ সময় প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও শত শত সমর্থক তাৎক্ষণিক তাঁর মুক্তির দাবিতে পুলিশ স্টেশনের সামনে রাস্তায় জড়ো হন।

পুলিশ স্টেশনের বাইরে নাভালনির মুক্তির দাবিতে জড়ো হন শত শত সমর্থক
ছবি: রয়টার্স

গত বছরের আগস্টে সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে মস্কোয় যাওয়ার পথে উড়োজাহাজে অসুস্থ হয়ে পড়েন নাভালনি। প্রথমে তাঁকে সাইবেরিয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি চিকিৎসার জন্য জার্মানির বার্লিনে যান। নাভালনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। বার্লিনে চিকিৎসা নিয়ে ধীর ধীরে সেরে ওঠেন তিনি। মাস কয়েক বার্লিনে থাকার পর নিজ দেশ রাশিয়ায় ফিরলেন তিনি।

নাভালনিকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে জানান চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, নাভালনিকে সোভিয়েত আমলে তৈরি নার্ভ এজেন্ট নোভিচক প্রয়োগ করা হয়েছিল।

নাভালনি ও তাঁর সহযোগীদের অভিযোগ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশেই তাঁকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল।

তবে নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন।