নেদারল্যান্ডসে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সাময়িকভাবে স্থগিত

ছবি: এএফপি

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকার ব্যবহার এবার সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। এটির সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন দেশে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ায় সতর্কতা হিসেবে গতকাল রোববার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। বার্তা সংস্থা এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সাময়িকভাবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবহার স্থগিত করে ডেনমার্ক, নরওয়ে, বুলগেরিয়া, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও থাইল্যান্ড।

যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) বলেছে, প্রাকৃতিকভাবেই মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এটি অস্বাভাবিক নয়। যুক্তরাজ্যে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

নেদারল্যান্ডস সরকার বলেছে, পূর্বসতর্কতা হিসেবে অন্তত ২৯ মার্চ পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবহার বন্ধ রাখবে তারা। তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকে নিরাপদ বলে বক্তব্য দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), যুক্তরাজ্য ও কানাডা। ডব্লিউএইচও বলেছে, এই টিকা গ্রহণের সঙ্গে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির কোনো সম্পর্ক নেই।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার পর কারও কারও শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার খবর প্রকাশের পর এ বিষয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে দ্য ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ)। সংস্থাটি বলেছে, এই টিকা গ্রহণের সুবিধা এখন পর্যন্ত এটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকির চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে নেদারল্যান্ডস সরকার বলেছে, ডেনমার্ক ও নরওয়ে থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সম্ভাব্য গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে খবর পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বসতর্কতা হিসেবে এর ব্যবহার সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো ডি জংগে বলেন, ‘এই টিকা নিয়ে আমরা কোনো সংশয় জিইয়ে রাখতে চাই না। সবকিছু ঠিক আছে, আমাদের তা নিশ্চিত করতে হবে। আর এ জন্য এ টিকার ব্যবহার সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।’

এর আগে নেদারল্যান্ডস অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ২০ লাখ ডোজ টিকার আগাম অর্ডার দেয়। আগামী দুই সপ্তাহে দেশটির প্রায় তিন লাখ মানুষকে এ টিকা দেওয়ার কথা ছিল।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা এক বিবৃতিতে বলেছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এ টিকার নিরাপত্তার দিকটি ব্যাপকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এটি নেওয়ায় শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কোনো নতুন ওষুধ অনুমোদনের ক্ষেত্রে এটির কার্যকারিতা ও নিরাপত্তার মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অনুসরণ করে বলেও জানায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এই ব্যাপারে পরিষ্কার যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিরাপদ ও কার্যকর।’ লোকজনের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এ টিকা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। যুক্তরাজ্য সরকার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান চালিয়ে যাবে বলেও তিনি জানান।

যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) বলেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সমস্যা তৈরি করেছে বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। লোকজনের এ টিকা নেওয়া উচিত।

এমএইচআরএ বলেছে, প্রাকৃতিকভাবেই মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এটি অস্বাভাবিক নয়। যুক্তরাজ্যে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।