ফ্রান্সে কৃষ্ণাঙ্গকে মারধর, দুই পুলিশ সদস্য রিমান্ডে

গত শনিবার একটি নিরাপত্তা বিলের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়। সেই বিলে পুলিশের মুখের ছবি তোলা বা সম্প্রচারে বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলা হয়
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সে কৃষ্ণাঙ্গ সংগীত প্রযোজক মাইকেল জেকলারকে মারধরের ঘটনায় চার শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ফ্রান্সের বিচার বিভাগ সূত্র দেশটির গণমাধ্যমকে আজ সোমবার জানায়, পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতা’ ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।

মাইকেল জেকলার ২১ নভেম্বর প্যারিসে তাঁর স্টুডিওতেই পুলিশ সদস্যদের মারধরে রক্তাক্ত হন। বিবিসির খবরে বলা হয়, ফ্রান্সের অনলাইন সংবাদমাধ্যম লুপসাইডার গত বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা কৃষ্ণাঙ্গ প্রযোজক মাইকেল জেকলারকে লাথি–ঘুষি মারছেন। পরে চতুর্থ পুলিশ কর্মকর্তাকে ভবনের ভেতরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে দেখা যায়। প্রথমে তাঁকে মাস্ক না পরার জন্য আটক করেছিল পুলিশ। এরপর মারধর করা হয়।

মাইকেল জেকলার অভিযোগ করেন, তিনি বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তাঁকে আটক করে সহিংসতার অভিযোগ আনা হয়।

এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ফ্রান্সে পুলিশের সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাটির আনুষ্ঠানিক তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়।

গত শনিবার এ ঘটনার জেরে চলমান একটি নিরাপত্তা বিলের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়। সেই বিলে পুলিশের মুখের ছবি তোলা বা সম্প্রচারে বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলা হয়। প্যারিসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়। এই বিলের বিরোধীদের ভাষ্য, এটি হলে পুলিশের নৃশংসতা প্রমাণ কঠিন হয়ে পড়বে।

আইনজীবীরা বলছেন, এই বিল পুলিশকে নিজেদের করা হয়রানি থেকে বাঁচাতে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।

‘উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে সহিংসতার’ এই অভিযোগের পাশাপাশি পুলিশের এই চারজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতিরও অভিযোগ আনা হয়।

আইনজীবীরা জানান, এই চার পুলিশ সদস্য নিজেদের কর্মকাণ্ড ঠিক হয়নি বলে স্বীকার করে নিলেও তাঁদের দাবি স্টুডিওতে ঢুকতে চাইলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। এতে তাঁরা ভয় পেয়ে যান। ঘটনা তদন্তে যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না হয়, সে জন্য তিন পুলিশ সদস্যকে রিমান্ডে নেওয়া দরকার বলে আদালতকে জানান। কিন্তু বিচারক শুধু দুজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো এ ঘটনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ ও ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি দ্রুত পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মধ্য আস্থার জায়গাটি তৈরি করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে বলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ফরাসি ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পেসহ অন্য ক্রীড়াবিদেরা এই নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করেন।

মাইকেল জেকলারের রক্তাক্ত মুখের ছবি টুইটারে প্রকাশ করে এমবাপ্পে লিখেছেন, ‘অসহনীয় ভিডিও, অগ্রহণযোগ্য সহিংসতা। বর্ণবাদকে না বলুন।’