ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট পেগাসাসের লক্ষ্য ছিল না: এনএসও

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এমানুয়েল মাখোঁ।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এমানুয়েল মাখোঁর ফোনে স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে আড়ি পাতা হয়েছে বা তার চেষ্টা হয়েছে—এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে পেগাসাসের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ। বিশ্বের অন্তত ১৪ জন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের ফোন নম্বর পেগাসাসের নজরদারির তালিকায় থাকার বিষয়টি সম্প্রতি সামনে আসে। ওই তালিকায় মাখোঁ ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রয়েছেন। খবর এএফপির।

স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার এনএসও গ্রুপের চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার সাইম গেলফান্ড টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আই ২৪ নিউজকে বলেন, প্রেসিডেন্টের মাখোঁর ফোনে আড়ি পাতার ‘লক্ষ্য’ তাঁদের ছিল না। পেগাসাস বিতর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু বিষয় সামনে এসেছে, যা আমাদের জন্য অতটা সন্তোষজনক নয়।’

সাইম গেলফান্ডের বক্তব্য টেলিভিশনে সম্প্রচারের দিনই পেগাসাস নিয়ে মন্তব্য করেন প্যারিসভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) প্রধান ক্রিস্টোফ দেলওয়া। তিনি পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ন্ত্রণে একটি কাঠামো প্রণয়ন না করা পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেতকে এই প্রযুক্তি রপ্তানি দ্রুত স্থগিত করতে বলেন।

আরএসএফের প্রধান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার পেগাসাস ব্যবহার করে শত শত সাংবাদিক এবং তাঁদের সোর্সের ওপর নজরদারি করছে। এসব সরকারকে পেগাসাস ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হলে তা বড় ধরনের গণতান্ত্রিক হুমকি ডেকে আনবে।
পেগাসাসের মাধ্যমে বিশ্বের যে ১৪ জন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের ফোন আড়ি পাততে টার্গেট করা হয়, তাঁদের মধ্যে আছেন তিনজন বর্তমান প্রেসিডেন্ট, তিনজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, সাতজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও একজন বাদশাহ। বর্তমান তিন প্রেসিডেন্ট হলেন ফ্রান্সের এমানুয়েল মাখোঁ, দক্ষিণ আফ্রিকার রামাফোসা ও ইরাকের প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহ। বর্তমান তিন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ইমরান খান ছাড়াও আছেন মিসরের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবৌলি ও মরক্কোর প্রধানমন্ত্রী সাদ এদ্দিন আল ওসমানি।

সাবেক সাতজন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আছেন ইয়েমেনের ওবায়েদ বিন দাগর, লেবাননের সাদ হারিরি, উগান্ডার রুখানা রুগুন্ডা, ফ্রান্সের দোরাদ ফিলিপ, কাজাখস্তানের বাকিতজান সাগিনতায়েব, আলজেরিয়ার নুরেদ্দিন বেদোই ও বেলজিয়ামের চার্লস মাইকেল। আর আছেন মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ। বলা হচ্ছে, সাত প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাসীন থাকার সময় তাঁদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে।

কিছুদিন ধরেই পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে আড়ি পাতা হয়েছে বা পাতার চেষ্টা করা হয়েছে ৫০টির বেশি দেশে। এসব ব্যক্তির তালিকায় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, লেখক, গবেষক, এনজিও কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টরাও রয়েছেন। এনএসও গ্রুপের একটি তথ্যভান্ডারে সংরক্ষিত ৫০ হাজার ফোন নম্বর ফাঁস হয়েছে। সেগুলো নিয়ে কয়েক মাস ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে স্মার্টফোনে আড়ি পাতার এই ঘটনা প্রকাশ করেছে ১৭টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

আড়ি পাতার ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধান করে এনএসও জানিয়েছে, তারা স্পাইওয়্যার ব্যবহারকারীদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে। প্রযুক্তির অপব্যবহারের অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আড়ি পাতাসহ যেকোনো কর্মকাণ্ডের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্রেতা দায়ী। এ ক্ষেত্রে এনএসওর কোনো দায়ভার নেই।

এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টকে এনএসও গ্রুপের প্রধান নির্বাহী শালেভ হুলিও বলেন, ‘আমাদের স্পাইওয়্যারের অপব্যবহার নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে আমি উদ্বিগ্ন। এটা ক্রেতাদের বিশ্বাসে ফাটল ধরাতে পারে। এর প্রতিটি অভিযোগ যাচাই করা উচিত বলে আমি বিশ্বাস করি। অভিযোগ যাচাইয়ের পরে হয়তো কিছু সত্যতাও মিলতে পারে। বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া গেলে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’