ফ্রান্সের হামলাকারী তিউনিসিয়া থেকে এসেছিলেন

মোমবাতি জ্বালিয়ে নিস শহরে হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মানুষ। বৃহস্পতিবার জার্মানির বার্লিনে ফ্রান্সের দূতাবাসের সামনে।ছবি: এএফপি

ফ্রান্সের নিস শহরের একটি গির্জায় ঢুকে ছুরিকাঘাতে তিনজনের হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হামলাকারী কয়েক দিন আগে তিউনিসিয়া থেকে এসেছিলেন। ফ্রান্সের সরকারি কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছেন।

আজ শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ২১ বছর বয়সী ওই তরুণ অভিবাসীদের নৌকায় করে গত মাসে ইতালির লামপেদুসা দ্বীপে পৌঁছান। আর সেখান থেকে আসেন ফ্রান্সে। তাঁর কাছে ইতালিয়ান রেড ক্রসের নথি ছিল। পুলিশের গুলিত তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন।

ফরাসি পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, হামলাকারীর নাম ব্রাহিম আউইসাউই।

স্থানীয় পুলিশ বলছে, নিস শহরের নটর ডেম বাসিলিকায় বৃহস্পতিবারের ওই হামলায় এক নারীসহ তিনজন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ওই নারীকে শিরশ্ছেদ করা হয়। হামলার পর পরই সন্দেহভাজন হামলাকারীকে আটক করেছে পুলিশ।

হামলার নিন্দা জানিয়ে মুসলিমরা নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বৃহস্পতিবার জার্মানির বার্লিনে ফ্রান্সের দূতাবাসের সামনে।
ছবি: এএফপি

হামলার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। এই সময় তিনি বলেন, সরকারি ভবনগুলো রক্ষায় শত শত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কৌঁসুলিরা এই হামলার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। ফ্রান্স পুরো দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে।

এর আগে নিসের মেয়র ক্রিশ্চিয়ান এস্ত্রোজি বলেন, এটা সন্ত্রাসী হামলা।

ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী প্রধান কৌঁসুলি জেন ফ্রান ও রিকার্দো বলেছেন, হামলাকারীর কাছ থেকে এক পবিত্র কোরআন, দুটি মোবাইল, ১২ ইঞ্চির একটি ছুরি পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, হামলাকারীর ফেলে যাওয়া একটি ব্যাগ পাওয়া গেছে হামলার স্থলে। ব্যাগের পাশেই দুটি ছুরি পড়েছিল যেগুলো হামলায় ব্যবহার করা হয়নি।

নিস শহরের গির্জা নটর ডেম বাসিলিকার কেন্দ্রস্থলে ছুরি নিয়ে হামলায়

নিস শহরে হামলার পর ফ্রান্সজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার। বৃহস্পতিবার নিস শহরে।
ছবি: এএফপি

নিহত তিনজনের একজন বাসিলিকার তত্ত্বাবধায়ক। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে আহতদের সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।

এ ঘটনার পর ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্থানীয় জনসাধারণকে হামলাস্থল এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই মন্ত্রণালয়ের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে।

১৬ অক্টোবর প্যারিসের শহরতলিতে এক শিক্ষককে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত ওই শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াতেন। ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ ক্লাসে তিনি শিক্ষার্থীদের মহানবী (সা.)-এর কার্টুন দেখিয়েছিলেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কার্টুন দেখানোর আগে ওই শিক্ষক ক্লাসে বলেছিলেন, ক্লাসে থাকা মুসলিম শিক্ষার্থীদের যদি খারাপ লাগে, তবে তারা বেরিয়ে যেতে পারে। এ ঘটনাকে ঘিরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ মন্তব্য নিয়ে মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্সের নিস শহর মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। গত ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই এক তিউনিসীয় নাগরিক জনমানুষের ভিড়ের মধ্যে ট্রাক চালিয়ে দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।