‘বার্তা’ দিতে কিয়েভে ইউরোপের চার নেতা

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি ও রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইয়োহানিস বৃহস্পতিবার কিয়েভ সফর করেনছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দেশটির বাহিনীর সঙ্গে রুশ বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। এরই মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফরে গেছেন ইউরোপের চার দেশের সরকারপ্রধান। ট্রেনে করে বৃহস্পতিবার তাঁরা কিয়েভে পৌঁছেন। পরে তাঁরা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইউক্রেনকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার ঘোষণার এক দিন পর তাঁরা এ সফর করলেন।

রুশ হামলার মুখে পূর্বাঞ্চল দনবাসে কোণঠাসা ইউক্রেনের বাহিনী। যুদ্ধে ইউক্রেনকে ‘পুরোপুরি সহায়তা না দেওয়ার’ অভিযোগ রয়েছে, পশ্চিমা বিশ্বের নেতাদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি ও রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইয়োহানিস কিয়েভ সফরে গিয়ে বলেন, ইউক্রেনের প্রতি সংহতি জানাতেই তাঁরা কিয়েভে এসেছেন।

বৃহস্পতিবার পোল্যান্ড থেকে ট্রেনে করে জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্সের নেতারা কিয়েভে পৌঁছেন। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস। কিয়েভে যাওয়ার আগে বুধবার ইউরোপের আরেক দেশ রোমানিয়ায় যান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। সেখানে তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিসেবে ইউক্রেন ও দেশটির জনগণ যাঁরা কয়েক মাস ধরে নায়কোচিতভাবে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক সংকেত দেওয়া প্রয়োজন।’

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু করে। প্রথমে রাজধানী কিয়েভ দখলের লক্ষ্যে হামলা শুরু করলেও পরে রাশিয়া জানায়, তারা পূর্বাঞ্চলকে ‘মুক্ত’ করতে এখন পুরোপুরি মনোযোগ দেবে। রাশিয়ার হামলার ঝুঁকির মধ্যেই গত মার্চে কিয়েভ সফরে যান ইউরোপের তিন দেশ পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রীরা। পরে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ কূটনীতিকেরা কিয়েভে গিয়ে ইউক্রেনের জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে সর্বশেষ সফরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। কারণ, ইউরোপ তথা বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির নেতারা রয়েছেন ওই সফরে।

আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, কিয়েভে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের আগে ইউরোপের চার দেশের নেতারা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরপিন শহর পরিদর্শনে যান। সেই সফরের বিষয়ে টুইট করেন জার্মানির চ্যান্সেলর। তিনি বলেন, বুচার মতো ইরপিনও রাশিয়া যুদ্ধের অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতার একটি প্রতীক। এ শহরের নিষ্ঠুর ধ্বংসযজ্ঞ একটি সতর্কবার্তা দিচ্ছে; আর তা হলো, এই যুদ্ধ অবশ্যই থামাতে হবে।

ইউক্রেন ও দেশের জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে ইউরোপের চার নেতা কিয়েভে সফরে আসায় তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন জেলেনস্কি। এর আগে আরও অস্ত্র সরবরাহের আহ্বান জানিয়ে এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘প্রতিদিন আমি ইউক্রেনের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পেতে লড়াই করছি।’

এর আগে অস্ত্রসহ বিভিন্ন সহায়তার বিষয়ে বুধবার জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় তিনি কিয়েভকে আরও অস্ত্র দেওয়ার ঘোষণা দেন। সেসব অস্ত্রের মধ্যে থাকবে কামান, জাহাজবিধ্বংসী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, কামানের গোলা ও অত্যাধুনিক রকেট। ফোনালাপে বাইডেন বলেন, কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে আছে। গণতন্ত্র রক্ষায় লড়ছে ইউক্রেন। তাদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সাহায্য চালিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রতিরক্ষা সহায়তার পাশাপাশি ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে আরও ২২ কোটি ৫০ লাখ ডলার মানবিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন।

এদিকে, পূর্ব ইউক্রেনের সেভেরোদোনেৎস্ক শিল্প শহরকে কেন্দ্র করে কয়েক সপ্তাহের তীব্র যুদ্ধের পর রুশ সেনারা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কাছাকাছি চলে এসেছেন।

ইউএস ইনস্টিটিউট অব ওয়্যারের তথ্য অনুযায়ী, রুশ সেনারা পশ্চিমা লিসিচানস্ক শহরের সঙ্গে সংযোগকারী তিনটি সেতু উড়িয়ে দিয়েছে। এতে ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে ওই শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেভেরোদোনেৎস্কের একটি রাসায়নিক কারখানায় কয়েকশ মানুষ আটকা পড়েছে বলে দাবি করে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। বুধবার তাদের সরিয়ে নিতে মানবিক করিডর খোলার কথা জানায় মস্কো।