বেগুনি রংটি যেভাবে নারী দিবসে এল...

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এক কর্মসূচিতে অংশ নেন এই নারী। সাও পাওলো, ব্রাজিল
ছবি: রয়টার্স

নারী দিবসের আবির্ভাব বৈষম্য থেকে, আর বৈষম্য নিরসনে ছিল সংগ্রাম। সংগ্রামের রং লাল। তাহলে বেগুনি কেন নারী দিবসের রং? ৮ মার্চ যখন বিশ্বজুড়ে নারী দিবস পালন হবে—এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই আসতে পারে, বেগুনি কি নিছকই আরেকটি বাণিজ্যিক রং, নাকি এই রঙের কিছু ইতিহাসও আছে?

শুধু যদি বেগুনি রং ধরে ইতিহাস বলতে হয়, তবে বেগুনি ২০১৮ সালে যুক্ত হয়েছে নারী দিবসের সঙ্গে। বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত রং নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্যানটোন। রঙের মিশ্রণ করা এবং রং মেলানোর মেশিন তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানটি সুপরিচিত। ২০১৮ সালে প্যানটোন বেগুনিকে বর্ষসেরা রঙের খেতাব দেয়। এই বেগুনি অবশ্য আমাদের চোখে দেখা বেগুনি রং নয়। এই বেগুনি হচ্ছে অতিবেগুনি রশ্মি।

যদিও দেখা যায় না, তারপরও মহাকাশের অজানার অস্তিত্ব বহনকারী রশ্মিকে সম্মান করতে বেগুনিকে বর্ষসেরা রঙের খেতাব দেওয়া হয়। প্যানটোনের ব্যাখ্যায়, বেগুনি মানে মহাকাশের মতো অসীম এবং তা থেকে নতুন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা।

প্যানটোনের দেওয়া এই ধারণাই লুফে নেয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্‌যাপন কর্তৃপক্ষ।

বেগুনি ঠিক নারীর মতো, স্বাতন্ত্র্য, কৌতূহল ও দূরদর্শী চিন্তাভাবনার। অতিবেগুনি রশ্মিকে যেমন জানার অনেক বাকি আছে, নারীর সম্ভাবনাকেও—এমনই মত নারীর সমতা আদায়ে সচেষ্ট সব মানুষের। নারী অধিকারকর্মীরা মনে করেন, নারী যদি তার স্বাতন্ত্র্য দিয়ে সামনে এগিয়ে আসতে পারে, তবে পৃথিবীও পাবে নতুন কিছু। এখান থেকেই বেগুনি নারী দিবসের সঙ্গে মিলেমিশে যায়। তবে নীল ও লালের মিশ্রণের এই রঙের ব্যাপকতা আরও বেশি। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা কাজ করেছে, তারা বেগুনিকে আরও বহুবার ব্যবহৃত করেছে সমানাধিকারের প্রতীক হিসেবে।

বিংশ শতকের শুরুতে ব্রিটেনের নারীরা যখন নিজেদের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য পথে নেমেছিলেন, তাঁরাও বেগুনি রংকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। বেগুনির সঙ্গে তাঁরা সাদা ও সবুজকে ব্যবহার করতেন নিজেদের অধিকারের কথা তুলে ধরতে। তাঁদের মতে, বেগুনি আভিজাত্যের প্রতীক, সাদা শুদ্ধতার এবং সবুজ আশার।

দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নারীদের অধিকার আদায়ের যুদ্ধ শুধু অভিজাত নারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এরপর আমেরিকান লেখক অ্যালিস ওয়ার্কার আফ্রিকান আমেরিকান নারীদের বৈষম্য নিয়ে একটি বই লেখেন, নাম ‘দ্য কালার পার্পেল’ (বেগুনি রংটি) বইটির জন্য অ্যালিস প্রথম অশ্বেতাঙ্গ নারী হিসেবে পুলিৎজার পুরস্কার পান। বেগুনি জড়িয়ে আছে নারীর বাধা পেরিয়ে এগোনোর পথে।

গত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালেও আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হবে বেগুনি রঙে। কোভিড-১৯–এর বছরে জাতিসংঘ নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’। আরও একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট ইন্টারন্যাশনাল ওমেনস ডে। তাদের প্রতিপাদ্য, চুজ টু চেঞ্জ বা বদল চাই। ওয়েবসাইটই নারী-পুরুষ সবাইকে এক হাত উঁচু করে ছবি তুলে #Choosetochallenge হ্যাশট্যাগ বৈষম্য নিরসনের চেষ্টার আহ্বান জানিয়েছে।

প্রতিবছরের বেগুনি রং নারী দিবসের আশা, একটি একটি বছর পার করে মানুষ একদিন অতিবেগুনি রশ্মির রহস্যও ভেদ করবে, হয়তো তার আগেই দূর হবে নারী ও পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য।

সূত্র: ইন্টারন্যাশনাল ওমেনস ডে ওয়েবসাইট