বেসামরিক নাগরিক হত্যার কথা স্বীকার রুশ সেনার

মামলার শুনানির সময় রুশ সেনা ভাদিম শিশিমারিনকে বিমর্ষ দেখায়
ছবি : রয়টার্স।

ইউক্রেনের একজন নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিককে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন রাশিয়ার এক সেনা। ওই রুশ সেনার নাম ভাদিম শিশিমারিন। বুধবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি আদালতে এ সংক্রান্ত মামলার শুনানির সময় ভাদিম শিশিমারিন ৬২ বছর বয়সী এক ইউক্রেনীয় নাগরিককে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলা হয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর এটাই প্রথম যুদ্ধাপরাধের মামলার শুনানি। গত ১৩ মে কিয়েভের একটি আদালতে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। একজন রুশ সেনার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলেও এই মামলার প্রতীকী গুরুত্ব অনেক বলে মনে করা হচ্ছে।

২১ বছর বয়সী ওই রুশ সেনার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের চুপাখিভকা গ্রামের ২৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বিচার শুরু পর থেকেই ওই রুশ সেনা কারাগারে আটক আছেন। তবে কবে তাকে আটক করা হয়েছিল সে বিষয়ে জানা যায়নি। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত রুশ সেনা ভাদিম শিশিমারিনকে হাতকড়া পরা অবস্থায় কিয়েভের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল তাঁকে। আদালতে প্রায় পুরোটা সময় তিনি মাথা নত করে ছিলেন। তাঁর থেকে কয়েক মিটার দূরেই বসে ছিলেন নিহত ওই ব্যক্তির স্ত্রী।

অভিযুক্ত ওই রুশ সেনাকে যখন আদালতে হাজির করা হয় ওই নারীর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। শুনানি শুরুর পর সরকারি কৌঁসুলি যখন তাঁর স্বামীকে হত্যার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন দুই হাত একসঙ্গে জড়ো করে ধরে বসে কাঁদছিলেন তিনি। বিচারক অভিযুক্ত সেনাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কি অপরাধ স্বীকার করছেন?’। উত্তরে শিশিমারিন বলেন, ‘হ্যাঁ, পুরো দায় স্বীকার করছি।’ বিচারকের এই প্রশ্নের উত্তরেও কাচের কাঠগড়া থেকেই সম্মতিসূচক জবাব দেন ওই সেনা।

এ সময় ইউক্রেনের একজন সরকারি কৌঁসুলি আদালতকে বলেন, শিশিমারিন রুশ ট্যাংক ইউনিটের প্রধান ছিলেন।

কৌঁসুলির ভাষ্যমতে, ভাদিম শিশিমারিন নিজেই ওই বেসামরিক নাগরিককে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর তিনি নিজেই মাথায় গুলি তাকে হত্যা করেন।

শিশিমারিন হত্যার কথা স্বীকার করার অল্প কিছুক্ষণ পরেই আদালত মুলতবি ঘোষণা হয়। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির উপস্থিতি অনেক বেশি হওয়ায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আদালত মুলতবি ঘোষণা করেন বিচারক।

বিবিসি বলছে, এই প্রথম ইউক্রেন যুদ্ধে কোনো রুশ সেনা যুদ্ধাপরাধের দায় স্বীকার করলেন। ইউক্রেনের প্রধান কৌঁসুলি ইরিনা ভেনেডিকটোভা টুইট করে বলেন, ‘প্রথম এ ধরনের মামলা দিয়ে আমরা প্রত্যেক অপরাধী, ইউক্রেনে অপরাধ সংগঠনের নির্দেশ দেওয়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, কেউ পার পাবে না।’

তিনি আরও জানান, এ ধরনের আরও মামলা আসছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। এ জন্য দেশটিতে ৪২ সদস্যের তদন্ত দল, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও সহায়তা কর্মী পাঠিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ করতে ইউক্রেনও আলাদা দল গঠন করেছে।