‘ভান্ডার ভরতে’ টিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছে ইইউ

রয়টার্স ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় টিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাচ্ছে না উল্লেখ করে এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ইইউ। গত শুক্রবার ইউরোপীয় কমিশন এ তথ্য জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠান ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদ্যমান চুক্তির প্রতি যথাযথ সম্মান না দেখালে ওই সব প্রতিষ্ঠানের তৈরি টিকা রপ্তানির অনুমোদন আটকে দেওয়ার ক্ষমতা জোটের দেশগুলোর রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিমালা দেশগুলোকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে। জোটের দেশগুলোতে টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে সেই ক্ষমতা প্রয়োগের পথে হাঁটছে ইইউ।  
টিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশন শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের কাছে আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সবার আগে এবং এমন চ্যালেঞ্জের মধ্যে আমরা পড়েছি, যার কারণে এটা করা ছাড়া আমাদের হাতে আর বিকল্প কোনো উপায় নেই।’

এ রকম টিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের শতাধিক দেশ। তবে গরিব দেশগুলোসহ অন্যান্য বেশ কিছু দেশ এ নিয়ন্ত্রণের আওতায় পড়বে না বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আগামী মার্চের শেষ দিকে ২৭ সদস্যভুক্ত জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ৮ কোটি ডোজ করোনার টিকা দেওয়ার কথা ছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার। কিন্তু ‘উৎপাদন সমস্যার’ কারণে সেই পরিমাণ টিকা আর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে ইইউকে জানিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠান। ওই সময়ের মধ্যে প্রতিশ্রুতির চেয়ে ৬০ শতাংশ কমিয়ে এখন ৩ কোটি ১০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে বলে জানায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে করোনার টিকা তৈরি করছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারও ইউরোপে করোনার টিকা সরবরাহ কমিয়ে দেয়। উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে এ অবস্থা আরও কয়েক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত থাকবে বলে জানায় ফাইজার। জার্মানির জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের সঙ্গে যৌথভাবে টিকা তৈরি করছে মার্কিন ওই প্রতিষ্ঠান।
বিশ্বের অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় ইউরোপে অনেক জোরালোভাবে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। কিন্তু এরপরও সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় টিকা কম সরবরাহ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কারণ, করোনার সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে ইউরোপের দেশগুলোতে। এখনো সেখানে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে করোনায় আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, টিকা নিতে এখন পর্যন্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে ৪০ কোটি, সানোফি–জেএসকে থেকে ৩০ কোটি, জনসন অ্যান্ড জনসন ৪০ কোটি, ফাইজার থেকে ৬০ কোটি, কিউরভ্যাক থেকে ৪০ কোটি ৫০ লাখ এবং মডার্না থেকে ১৬ কোটি ডোজ টিকার চুক্তি করেছে জোটটি।

করোনার টিকা আবিষ্কারে যেসব দেশ এগিয়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন ও ভারত অন্যতম। এসব দেশ টিকাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিজেদের দেশের নাগরিকদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ফলে টিকার ন্যায্য বণ্টন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। টিকা বৈষম্যের কারণে ‘বিশ্ব নৈতিক বিপর্যয়ের মুখে’ রয়েছে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গরিব দেশগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর আগে সম্পদশালী দেশগুলোর সুস্থ-সবল ও তরুণ ব্যক্তিদের টিকা প্রাপ্তিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেও উল্লেখ করেছে বিশ্ব সংস্থাটি। উৎপাদন বাড়াতে করোনা টিকা তৈরির পদ্ধতিকে সর্বজনীন করতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বানও জানানো হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ পদক্ষেপকে সমালোচনা করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। ডব্লিউএইচও বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন টিকা নিয়ন্ত্রণের পথ বেছে নিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টিকাপ্রাপ্তির পথকে আরও কঠিন করে তুলবে।