ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয়ভাবে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করা উচিত: মাখোঁ

ফ্রান্স ও ভারতে সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানান মোদি ও মাখোঁ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ফ্রান্স ও ভারতে সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানান মোদি ও মাখোঁ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ভারত-পাকিস্তানের উচিত দ্বিপক্ষীয়ভাবে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করা। এ অঞ্চলের সহিংসতায় তৃতীয় কোনো পক্ষের ‘হস্তক্ষেপ করা বা উসকানি দেওয়া’ উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ম্যারাথন আলোচনায় এ মন্তব্য করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। প্যারিসের প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে ফরাসি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রত্ন শাতেউ দে শান্তিলিতে দুই নেতা প্রায় ৯০ মিনিটব্যাপী আলোচনা করেন। এ সময় ভারত ও ফ্রান্সের গতিশীল এবং বহুমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা করেন তাঁরা।

মোদি ও মাখোঁর বৈঠক শেষে প্রতিনিধিদল পর্যায়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে দুই দেশ চারটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে।

আলোচনার পর যৌথ প্রেস বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁকে জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবহিত করেছেন। বিষয়টি তাঁদের সার্বভৌমত্বের অংশ বলে জানিয়েছেন মোদি।

প্রেসিডেন্ট মাখোঁ বলেছেন, ‘আমি মোদিকে বলেছি, ভারত ও পাকিস্তানকে দ্বিপক্ষীয়ভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ অঞ্চলের সহিংসতায় তৃতীয় কোনো পক্ষের “হস্তক্ষেপ করা বা উসকানি দেওয়া” উচিত নয়।’ এ অঞ্চলে শান্তি বজায় রেখে জনগণের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন তিনি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলব। আলোচনাগুলো দ্বিপক্ষীয়ভাবে আয়োজন করতে বলব তাঁকে।’

ভারতকে ফ্রান্সের যে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান দেওয়ার কথা ছিল, তার প্রথমটি আগামী মাসে পৌঁছে যাবে বলে জানান তিনি।

প্রেসিডেন্ট মাখোঁর পর বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারত ও ফ্রান্সের সম্পর্ক কোনো স্বার্থপরতার ভিত্তিতে নয়, বরং ‘স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের’ আদর্শের ওপর ভিত্তি করে বেড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করতে ভারত ও ফ্রান্স সহযোগিতা আরও বাড়িয়ে দেবে।

মোদি বলেন, ‘উভয় দেশই প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসবাদের সম্মুখীন হচ্ছে। আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ফ্রান্স আমাদের যে মূল্যবান সমর্থন দিয়েছে, তার জন্য প্রেসিডেন্ট মাখোঁকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করার বিষয়ে সহযোগিতা আরও বাড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করছি।’ তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফ্রান্স এবং ভারত সহাবস্থান নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের পথ তৈরি করতে পারি।’

আলোচনার পর এক যৌথ বিবৃতিতে দুই নেতা ফ্রান্স ও ভারতে সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের রেজল্যুশনের যৌথ সমন্বিত পরিকল্পনা (জেসিপিওএ) সম্পূর্ণ মেনে চলার ব্যাপারে একমত হয়েছে ফ্রান্স ও ভারত। সংলাপের মাধ্যমে চলমান সমস্যাগুলো শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যাবে বলে মনে করেন দুই নেতা।