যৌথ মহড়ায় চীন সীমান্তে রাশিয়ার তিন লাখ সেনা সমাবেশ

‘ভসটক ২০১৮’ এমন সময়ে করা হচ্ছে, যখন পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছবি: রয়টার্স
‘ভসটক ২০১৮’ এমন সময়ে করা হচ্ছে, যখন পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছবি: রয়টার্স

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রথমবারের মতো বড় ধরনের সামরিক মহড়ায় নেমেছে রাশিয়া। গতকাল মঙ্গলবার থেকে চীনের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় শুরু হওয়া দুই দেশের যৌথ মহড়ায় তিন লাখ সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে রাশিয়া। বলা হচ্ছে, কোনো মহড়ায় এটাই দেশটির সবচেয়ে বড় সেনা সমাবেশ।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এর আগেও চীন ও রাশিয়া যৌথভাবে মহড়া করেছে। তবে সেগুলো এত বড় আকারের ছিল না। এই মহড়াকে ‘ভসটক ২০১৮’ বা ‘পূর্ব ২০১৮’ বলা হচ্ছে। ১১ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাইবেরিয়া ও দেশটির দূরবর্তী পূর্বাঞ্চলজুড়ে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর মহড়াকে ‘ভসটক ২০১৮’ নাম দেওয়া হয়েছে। এই মহড়ায় চীন, মঙ্গোলিয়া ও উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট ন্যাটো সদস্য তুরস্ককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্কের পাশাপাশি এই মহড়ার মাধ্যমে মস্কো বেইজিংকে এই বার্তা দিতে চাইছে যে কম লোকজনের বসতির পূর্ব অঞ্চলকে রক্ষা করার সামর্থ্য ও প্রস্তুতি রয়েছে মস্কোর। রাশিয়ার বন্দর নগরী ভ্লাদিভসটকে সদ্য সমাপ্ত অর্থনৈতিক ফোরামের এক সভায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বৈঠকে এই মহড়ার ব্যাপারে বিশদ আলোচনা হয়।

‘ভসটক ২০১৮’ এমন সময়ে করা হচ্ছে, যখন পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ন্যাটো বলছে, তারা এই মহড়া গভীর মনোযোগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবে। যুক্তরাষ্ট্রও এই মহড়া পর্যবেক্ষণ করছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি রয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, মহড়ায় অংশ নিতে যাওয়া ট্যাংকের সারি, সমরাস্ত্রসজ্জিত যান ও যুদ্ধজাহাজ চলাচল করছে এবং যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার আকাশে উড়ে যাচ্ছে। আরেকটি ফুটেজে দেখা গেছে, রাশিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে আলাস্কার বিপরীতে উপকূলে নৌবহর নামছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ মহড়া চলবে।

এই মহড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে দূরের গন্তব্যে সামরিক বাহিনী চলাচলের প্রস্তুতি পরীক্ষা। রাশিয়া গত মাসে ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে বড় ধরনের নৌ মহড়া চালিয়েছে। ওই সময়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষে সিরিয়ার ইদলিবে বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা চালায় রাশিয়া।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, এই মহড়ার মাধ্যমে ওয়াশিংটনকে নিজেদের শক্তিমত্তার বার্তা দিতে চাইছে মস্কো।

মহড়ার মূল জায়গাটি হচ্ছে মস্কো থেকে পাঁচ হাজার কিলোমিটার পূর্বে। ফলে, এই মহড়া চীন ও মঙ্গোলিয়ার পাশাপাশি জাপান, দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়া দেখতে পাবে।

মহড়ায় রাশিয়ার এক হাজারের বেশি সামরিক বিমান, দুটি নৌবহর, ৩৬ হাজার ট্যাংক ও সশস্ত্র যান এবং আকাশপথের প্রতিটি ইউনিট অংশ নিয়েছে।

রাশিয়ার সাবেক কর্নেল এবং থিংক ট্যাংক কারনিজ মস্কো সেন্টারের পরিচালক দিমিত্রি ট্রেনিন বলেছেন, ভসটক ২০১৮-এর মাধ্যমে রাশিয়া বার্তা দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রকে তারা শত্রু ও চীনকে মিত্র বলে মনে করে। আর এই মহড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে চীনও জানান দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ তাদের মস্কোর সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এদিকে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে সামরিক জোটের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, এই দুই দেশের জোট দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে তিনি কখনো দেখেননি।